ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

রাজারহাটের চরে স্যানিটেশন সংকট, বন্যায় দুর্ভোগ চরমে

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম  

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২ জুলাই ২০২৫

রাজারহাটের চরে স্যানিটেশন সংকট, বন্যায় দুর্ভোগ চরমে

রাজারহাটের তিস্তার চরের মানুষের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক, দূর্যোগের বার্তা দিবে লাইটহাউজের অ্যাপস।কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তার চরের মানুষের স্যানিটেশন ব্যবস্থা দূর্বল হওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গর্ভবর্তী নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশু-কিশোরীরা। এ কারণে বন্যার সময় নারী ও কিশোরীরা মানসিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।


মঙ্গলবার (১ জুলাই) উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ বগুড়া পাড়া ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরে প্রায় ৫হাজার পরিবারের বাস। অধিকাংশ বাড়িতে গর্ত করে ল্যাট্রিন তৈরি করেছে। ল্যাট্রিনটি কোন রকমে প্লাস্টিকের বস্তা এবং কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। দুর থেকে বোঝা যায় কেউ প্রকৃতির সাড়ায় বসে রয়েছে। আবার চরের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশীরভাগ সময় তাঁরা খোলা জায়গায় পায়খানা করতে অভস্ত। নদীর কিনারে কিংবা ঝোঁপে-ঝাঁড়ে পায়খানা করেন বলে জানান তাঁরা। অর্ধশতাধিক নারী ও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- পুরুষরা কাজের জন্য মাঠে থাকেন। তাঁরা মাঠেই পায়খানা-প্রসাবের কাজ সেরে নেন। মহিলারাও মাঠে কাজ করেন। তবে তারা খোলা মেলা জায়গায় না গিয়ে বাড়ির পাশে গর্ত করে ল্যাট্রিন তৈরি করেছেন। সেখানে তারা পায়খানা  ও প্রষাব করেন।  


ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বগুড়া পাড়া এলাকার জাহানারা বেগম(৪৫) বলেন, চরে কোন হাই স্কুল নাই। আছে শুধু একটি প্রাইমারী স্কুল। সেটিও বার বার নদী ভাঙ্গে। এখানে শিক্ষিত পোলাপান নাই। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়। নারীরা এখানে অবহেলার পাত্র। এছাড়া এখানে কারো রোগবালাই হলে ভাল চিকিৎসা হয় না। বন্যার সময় ও পরবর্তী দিনগুলোতে এখানে গর্ভবর্তী ও অসুস্থ মহিলাদের চিকিৎসাসেবা  হয়ে না। চিকিৎসা অভাবে হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেকে মহিলা ও বৃদ্ধ রোগী মারা যায়। 


৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া আয়শা বেগম বলেন, বান(বন্যা) হলে এই চর ডুবি যায়। হামার খুব কষ্ট হয়। বাড়ি ঘর,রাস্তা পানির নীচে তলে যায়। তখন পায়খানা করা খুব কষ্ট হয়। ঘরতেই পায়খানা করা লাগে। এমনও হয়। 
ওই চরের কুদ্দুস শেখ(৫৫) বলেন, বন্যা হলে খুব দূর্গতি হয়। বিশেষ করে মহিলা শিশু ও বৃদ্ধদের। মাঝে মাঝে এনজিওর লোক আসে। তারা পাকা ল্যাট্রিন তৈরি কথা বলে। কিন্তু চরত এগুলো করে লাভ নাই। বান(বন্যা) হলে সব ভাসি যায়। 


চরবগুড়া পাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম(৩৫) ও চর বিদ্যানন্দ এলাকার শরিফুল ইসলাম(৩৮) বলেন সরকারের কাছে হামার একটাই দাবী হাসপাতাল বা ক্লিনিক যাওয়ার মতো আমাদের কোন যান বাহন নাই। সবাই মিলে একটা ঘাটের নৌকা দিলে ভাল হতো। 
৬ষ্ঠ শ্রেণির রাফিয়া ও আয়শা এবং ৮ম শ্রেণির রুমি, রাবেয়া বলেন, চরে মেয়েদের লেখাপড়া করা খুবই কষ্ট। অভাব আর ভয়ে বাপ-মা আমাদের বিয়ে দিতে চায়। নদী পারাপার করা খুব কষ্টের। বান হলে তো নদী ওপারের মাদরাসায় যাওয়াই বন্ধ করে দেয়। বানের সময় এখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট, স্যানিটেশন, আশ্রয় কেন্দ্র ও নারীদের নানামূখী সমস্যার সৃষ্টি হয়।


লাইট হাউজ সংস্থার জেলা কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলম বলেন -দূর্যোগ নিয়ে লাইট হাউজ কাজ করছে। চরাঞ্চলে জেন্ডার-স্যানিটেশন ও দূর্যোগকালীন সময়ে মহিলা ও কিশোরীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চরের মানুষ ও কৃষকদের জন্য অ্যাপস তৈরি করে আবহাওয়া বার্তা দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


এব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন চরে নানা মূখী সমস্যা। আমাদের জেলা প্রশাসক স্যার চর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। বাজেট হলে প্রকল্প করে কাজ গুলো করা যাবে। 
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল ইমরান বলেন- কিছুদিন আগে আমরা হেঁটে হেঁটে তিস্তার চর ও চরের মানুষের জিবনমান দেখে এসেছি। এমনকি সেখানে চর উন্নয়নের জন্য ডিসি স্যার নিজে গেছেন। কাজ চলছে। চরের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটতে পারে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।#রাজু মোস্তাফিজ

আঁখি

×