
মাত্র তিন মাস আগে হয়েছিল রাজকীয় বিয়ে। উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল ৭০ লাখ টাকার ভলভো গাড়ি এবং ৮০০ গ্রাম (১০০ ভরি) সোনার গয়না। কিন্তু এত কিছু পাওয়ার পরও থেমে থাকেনি পণের নির্যাতন। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পেস্টিসাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ভারতের তামিলনাড়ুর ২৭ বছর বয়সী নববধূ ঋধান্যা।
জানা যায়, ঋধান্যা ছিলেন একটি গার্মেন্ট কোম্পানির মালিক আননদুরাইয়ের মেয়ে। এ বছর এপ্রিল মাসে তাঁর বিয়ে হয় ২৮ বছর বয়সী কাবিন কুমারের সঙ্গে। প্রথম থেকেই বরপক্ষ দাবি করে বিপুল পরিমাণ পণ, যা পূরণও করা হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।
মৃত্যুর আগে ঋধান্যা বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপে সাতটি অডিও মেসেজ পাঠান, যেখানে তিনি নিজের অসহায়তা ও অপমানের কথা বলেন। একটি মেসেজে তিনি বলেন, "প্রতিদিন ওদের মানসিক নির্যাতন আর সহ্য হচ্ছে না। সবাই শুধু বলে মেনে নাও, জীবন এমনই... কিন্তু কেউ বোঝে না আমি কী কষ্টে আছি।"
তিনি আরও বলেন, "তোমরা ভাবতে পারো আমি মিথ্যা বলছি, কিন্তু আমি জানি আমি কী সহ্য করেছি। ওরা সবাই শুধু অভিনয় করছে। আমি আর এই জীবন চাই না।"
সবশেষে তিনি বলেন, "তোমরা আর মা ছিলে আমার পৃথিবী। কিন্তু আমি তোমাদের কষ্ট দিয়েছি। ক্ষমা করে দিও। এবার সব শেষ।"
ঋধান্যা মন্দিরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরে রাস্তার ধারে গাড়ি থামিয়ে কীটনাশক ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। গাড়ির ভেতরে তাঁর নিথর দেহ ও মুখে ফেনা দেখতে পায় স্থানীয়রা, পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পরে জানা যায়, বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় তিনি বাবার বাড়ি ফিরে আসেন নির্যাতনের কারণে। তখনো বাবা-মা তাঁকে বোঝান—"নতুন পরিবার, মানিয়ে নাও।" কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
ঋধান্যার বাবা আননদুরাই সাংবাদিকদের বলেন, "ওরা আমাদের ঠকিয়েছে, বলেছিল ভালো পরিবার। অথচ কী ভয়ংকর মানসিক আর শারীরিক নির্যাতন করতো ওকে! শুনলে চোখে পানি এসে যাবে।"
তিনি আরও জানান, ওদের পরিবার একবার তাঁর মেয়েকে ঘরে আটকে রেখে বলে, "তোমার নিরাপত্তার জন্য এটা করছি।"
ঘটনার পর কাবিন কুমার, তাঁর বাবা ঈশ্বরমূর্তি এবং মা চিত্রাদেবীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে পোস্টমর্টেমের জন্য।
মিমিয়া