
ছবি: সংগৃহীত
বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের ১১টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিহারে ভোটার তালিকার বৃহৎ পরিসরে হঠাৎ সংশোধন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৈঠক শেষে নেতারা জানান, কমিশনের জবাব আরও হতাশাজনক ও অসন্তোষজনক ছিল।
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর আমাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে, কারণ কমিশন আমাদের একটিও প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।” তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিকে “ভোটবন্ধি” বলে অভিহিত করেন।
সমস্যা শুরু হয় যখন কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), সিপিআই(এম), সিপিআই, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এনসিপি (শরদচন্দ্র পাওয়ার) এবং সমাজবাদী পার্টির প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের দিল্লির কার্যালয়ে পৌঁছান এবং তাদের জানানো হয়, প্রতি দল থেকে সর্বোচ্চ দুইজন প্রবেশ করতে পারবেন।
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, “প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনে প্রবেশের নিয়ম আমাদের জানানো হলো। বলা হলো, কেবল দলপ্রধানরাই প্রবেশ করতে পারবেন। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের গঠনমূলক আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়। আজ কেবল দুজন করে প্রবেশ করতে পারায় জয়রাম রমেশ, পবন খেরা ও অখিলেশ সিং-এর মতো নেতারা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।”
এরপর একটি তিন ঘণ্টার বৈঠকে দলগুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। বিরোধীরা অভিযোগ করে, বিহারে বিশেষ নিবিড় ভোটার যাচাই ও তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া—যার মধ্যে রয়েছে ভোটারের শারীরিক যাচাই, নথিপত্র যাচাই ও অযোগ্য ভোটারদের বাদ দেওয়া—এত অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হলে তা বহু ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে এবং অনুপযুক্ত ভোটারকে তালিকাভুক্ত করতে পারে।
সিংভি প্রশ্ন তোলেন, “২০০৩ সালে শেষ নিবিড় সংশোধনের পর নির্বাচনের সময় এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। এবার কেন মাত্র ২-৩ মাস আগে এ সিদ্ধান্ত? জানুয়ারি পর্যন্ত তো এর কথা বলেননি। হঠাৎ এখন কেন? আমরা সংশোধনের বিপক্ষে নই, কিন্তু নির্বাচন শেষে সাবধানতার সঙ্গে করা উচিত।” তিনি বলেন, বিহারে প্রায় আট কোটি ভোটার, তাই কম সময়ের মধ্যে এমন কার্যক্রম চালানোতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিংভি আরও অভিযোগ করেন, “কমিশন অন্যান্য সব ক্ষেত্রে আধার চায়, কিন্তু এখানে চায় না কেন?”
আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেন, “এই প্রক্রিয়া যদি অন্তর্ভুক্তির পরিবর্তে বর্জনের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে এর উদ্দেশ্য কী?” তিনি বলেন, “২০০৩ সালের তালিকায় না-থাকা ভোটারদের জন্য যেসব ১১ ধরনের নথি চাওয়া হয়েছে, সেগুলো বেশিরভাগের কাছেই নেই। কোটি কোটি মানুষকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলে রাস্তায় গণবিক্ষোভ শুরু হবে।”
তিনি কমিশনের উদ্দেশ্য ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা করেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন নেতা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, কমিশনের ব্যাখ্যা “অসন্তোষজনক” এবং বিহারে গণতন্ত্র হুমকির মুখে।
ভট্টাচার্য বলেন, কমিশন স্বীকার করেছে যে বিহারের ২০% ভোটার রাজ্যের বাইরে থাকেন, ফলে তারা ভোটাধিকার হারাতে পারেন। তিনি বলেন, “এটা ‘ভোটবন্ধি’, ২০১৬ সালের ‘নোটবন্ধির’ মতোই ভয়াবহ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, লক্ষ লক্ষ ভোটারদের কাছে পরিচয়পত্র জমা দিতে এক মাস যথেষ্ট নয়। বিহারে গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। এখন দরকার এক বৃহত্তর গণআন্দোলন।”
এনডিটিভির এক প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সিংভি বলেন, আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মনোজ ঝা বলেন, “এখানে এসব বলা ঠিক হবে না। আমরা পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানাবো।”
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন জানায়, বিশেষ নিবিড় সংশোধন সংবিধানের ৩২৬ অনুচ্ছেদ, ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ২৪.০৬.২০২৫ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন হচ্ছে। কমিশন জানায়, “প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারা যেসব উদ্বেগ জানিয়েছেন, তার প্রতিটিকে গুরুত্ব দিয়ে জবাব দেওয়া হয়েছে।”
দুইজন প্রতিনিধি অনুমোদনের বিষয়ে কমিশনের ভাষ্য, “সব দলের ভিন্নমত শোনা নিশ্চিত করতেই প্রতি দল থেকে দুজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিছু নেতা আগেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন, অন্যদেরও অনুমতি দেওয়া হয়। আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাই যাতে কোনো যোগ্য ভোটার বাদ না পড়ে।”
শহীদ