
ছবি: সংগৃহীত
নাগাল্যান্ডের ফেক জেলার শান্তিপূর্ণ পাহাড়ঘেরা কিক্রুমা গ্রামে রয়েছে এক বিস্ময়কর কৃষি প্রযুক্তি—‘জাবো চাষ পদ্ধতি’। চাখেসাং উপজাতি কর্তৃক উদ্ভাবিত এই কৃষি-পদ্ধতি একাধারে পানি সংরক্ষণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই চাষের এক যুগান্তকারী উদাহরণ। ৮০ থেকে ১০০ বছর ধরে চলে আসা এই পদ্ধতিটি এখনো জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে দারুণভাবে কার্যকর।
কিভাবে জাবো চাষপদ্ধতি কাজ করে?
এই প্রথাগত চাষপদ্ধতি তিনটি স্তরে বিভক্ত—পাহাড়ের উপরের অংশে বন সংরক্ষণ, মাঝামাঝি স্তরে গবাদি পশুর খামার ও জলাধার, এবং নিচে ধানক্ষেত। উপরের বনাঞ্চল পানি ধারণ করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। মাঝামাঝি স্তরে তৈরি করা ‘রুজা’ নামের বড় পুকুরগুলো পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামা বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে।
এই পানি ধীরে ধীরে নিচের ধানক্ষেতে ছাড়া হয়, যাতে হঠাৎ বন্যার সম্ভাবনা থাকে না। একইসঙ্গে, গবাদি পশুর খামার থেকে প্রাকৃতিক সারের মতো কার্যকর গোবর ও মূত্র ওই পানি ধারণ করে নিচের জমিতে পুষ্টি জোগায়। এসব জলাধারে মাছ চাষও করা হয়, যা গ্রামের পুষ্টি ও আয় উভয়ই বাড়ায়।
জাবো চাষপদ্ধতিতে কোনো মোটর, পাম্প বা বিদ্যুতের ব্যবহার নেই। সম্পূর্ণভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে পানি পৌঁছানো হয় জমিতে। জমিগুলো সিঁড়ি আকারে সাজানো হয় যাতে পানি সরাসরি নিচের স্তরে প্রবাহিত হতে পারে। পানি সরবরাহের খালগুলো এমনভাবে তৈরি, যা গবাদিপশুর আবর্জনা জড় করে জমিতে পৌঁছায়, ফলে রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয় না।
জাবো কেবল ধানচাষ নয়; এর সাথে থাকে গবাদিপশু পালন, মাছ চাষ, বনজ উদ্ভিদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঔষধি গাছ সংরক্ষণ। এটি একটি সমন্বিত পদ্ধতি যেখানে একটিই বাস্তুতন্ত্র থেকে বহু ধরনের ফলন পাওয়া যায়। এটি মাটি ক্ষয় রোধ করে, জৈবিক বৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব।
এই কৃষিপদ্ধতির মূল শক্তি গ্রামের মানুষের ঐক্য। প্রতিটি পরিবার নিজ দায়িত্বে পানি চ্যানেল ও পুকুর পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। এই সমষ্টিগত উদ্যোগ জাবো চাষকে শুধু কৃষি নয়, বরং এক সংস্কৃতির রূপ দিয়েছে।
যেখানে সারা পৃথিবীতে জলবায়ুজনিত দুর্যোগ, খরা ও বন্যা বেড়েই চলেছে, সেখানে জাবো চাষপদ্ধতি এক টেকসই, লোকায়ত এবং বৈজ্ঞানিক উত্তর হতে পারে। এই পদ্ধতি দেখায়, প্রযুক্তি নয়, বরং প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।
মুমু ২