
ছবি: ডা. মারওয়ান সুলতান উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক
ইসরায়েলের চলমান বিমান হামলায় গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. মারওয়ান সুলতান নিহত হয়েছেন। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতের সময় তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যও সঙ্গে ছিলেন।
উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের দীর্ঘদিনের পরিচালক ডা. সুলতান একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিনি ছিলেন "সহানুভূতির প্রতীক", যিনি "গাজার মানুষের ওপর চলমান আগ্রাসনের মধ্যেও চিকিৎসা সেবায় অটল ও নিষ্ঠাবান ছিলেন"।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজা সিটির এক এলাকায় হামাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলেও জানিয়েছে।
ডা. সুলতানের কন্যা লুবনা আল-সুলতান জানান, একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি তার বাবার কক্ষে আঘাত হানে। পুরো বাড়ি অক্ষত থাকলেও কেবল তার বাবার কক্ষ ধ্বংস হয়ে যায়। লুবনা বলেন, “আমার বাবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যুদ্ধকালেও তিনি শুধুমাত্র রোগীদের নিয়েই ভাবতেন।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর গাজায় এখন কার্যকর কোনো হাসপাতাল নেই। বারবার ইসরায়েলি হামলার ফলে হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালটিকে চিকিৎসাসেবার জন্য "অযোগ্য" ঘোষণা করেছিল।
এদিকে, গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুও ছিল। উল্লেখ্য, এলাকাটিকে ইসরায়েল "নিরাপদ অঞ্চল" হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
এ হামলায় আহত এক ব্যক্তি বলেন, "তারা নিরাপদ এলাকা ভেবে এখানে এসেছিল, কিন্তু এখানেই প্রাণ হারাল। তারা কী দোষ করেছিল?" হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মাঝে পড়ে থাকা ডায়াপারের প্যাকেট দেখিয়ে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, “এটা কি কোনো অস্ত্র?”
এএফপির একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে রক্তাক্ত শিশুদের কোলে নিয়ে দৌঁড়াচ্ছেন মানুষজন। ছোট ছোট শিশু কাঁদছে, ডাক্তাররা দিশেহারা হয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এদিকে গাজায় কাজ করা সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা র্যাচেল কামিংস জানান, শিশুবান্ধব কেন্দ্রে এখন শিশুরা বলছে, তারা “মরে যেতে চায়”— যেন তাদের মৃত বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে পারে অথবা খাবার ও পানি পায়।
গাজায় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি ছুঁয়েছে। বিদ্যুৎ, ফ্যান এবং পানির সংকটে তাঁবুতে থাকা বাস্তুচ্যুতরা অতিরিক্ত গরমে ছটফট করছে।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে বা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। চলমান হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে মধ্যস্থতাকারীদের উদ্যোগে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যাদের মধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
নোভা