ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

কে হবেন তিব্বতের পরবর্তী দালাইলামা? তিন পরাশক্তির উত্তপ্ত রেষারেষি

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:৩৪, ৩ জুলাই ২০২৫

কে হবেন তিব্বতের পরবর্তী দালাইলামা? তিন পরাশক্তির উত্তপ্ত রেষারেষি

ছবি: সংগৃহীত

তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার উত্তরসূরি নির্বাচন শুধু ধর্মীয় নয়, এখন তা হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির এক জটিল অধ্যায়। চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পরাশক্তির স্বার্থ ও অবস্থানকে ঘিরেই এখন প্রশ্ন, কে হবেন পরবর্তী দালাইলামা?

আগামী ৬ জুলাই ৯০ বছরে পা রাখবেন বর্তমান ১৪তম দালাইলামা। এ উপলক্ষে তিনি তার উত্তরসূরির বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিব্বতীয় বৌদ্ধ মতে, একজন জ্যেষ্ঠ ধর্মগুরুর আত্মা পুনর্জন্মের মাধ্যমে অন্য দেহে আবির্ভূত হন এবং সেইভাবেই খুঁজে বের করা হয় পরবর্তী দালাইলামাকে।

দালাইলামার প্রকৃত নাম লহামো ধন্ডুপ। ১৯৩৫ সালে তিব্বতের একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র দুই বছর বয়সে সিনিয়র লামাদের দেখা এক স্বপ্নের ভিত্তিতে তাকে খুঁজে বের করে অনুসন্ধানী দল। একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, ধন্ডুপই হচ্ছেন পরবর্তী দালাইলামা। ১৯৪০ সালের শীতকালে তাকে লাসার পেতালা প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা ঘোষণা করা হয়।

দালাইলামা ২০২৫ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’–এ জানিয়েছেন, পরবর্তী দালাইলামা চীনের বাইরে জন্ম নেবেন। ১৯৫৯ সালের ব্যর্থ বিদ্রোহের পর তিনি তিব্বত ছাড়েন এবং ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্ব বর্তেছে ধর্মশালাভিত্তিক গ্যাডেন ফোদরাং ফাউন্ডেশনের ওপর, যা তিনি নিজেই ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।

তবে এ বিষয়ে চীন একমত নয়। বেইজিংয়ের দাবি, ১৭৯৩ সালের কুইং সাম্রাজ্যের ‘স্বর্ণপাত্র পদ্ধতি’ অনুসারে সম্ভাব্য শিশুদের তালিকা থেকে নাম নির্বাচন করবে চীনা কর্তৃপক্ষ। একে তিব্বতীরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। দালাইলামাও স্পষ্ট করে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এমন ধর্মীয় হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি আইন স্বাক্ষর করেন, যেখানে বলা হয় তিব্বতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে চীনের চাপ মেনে নেওয়া হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী দালাইলামা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি আধ্যাত্মিক সিদ্ধান্ত এখন তিন পরাশক্তির কূটনৈতিক সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। তিব্বতের ভবিষ্যৎ শুধু বৌদ্ধ অনুসারীদেরই নয়, সারা বিশ্বের ভিন্নমতের স্বাধীনতার প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ এক ইঙ্গিত বহন করছে।

রাকিব

×