
আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য দায়ী চট্টগ্রামের পটিয়া থানার বিতর্কিত ওসি জায়েদ নুর। তিনি যোগদানের পর এখানে গরু চুরি, ছিনতাই, খুন, ডাকাতি, জায়গা দখল-বেদখল, কিশোর গ্যাং এর উপদ্রব বেড়ে যায়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ছিল ব্যর্থ। এলাকায় ডাকাতি হলে তিনি উধ্বর্তন কর্মকর্তা জানাতেন চুরি হয়েছে। গরু চুরি হলে বলতেন হয়নি। গরু চোরের কারণে পটিয়ার বেশির ভাগ খামারী এখন নি:স্ব।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট দেশে গণঅভ্যুত্থান আওয়ামী লীগের পতন হয়। ওইদিন পটিয়াতেও ছাত্রদের উপর হামলা করা হয়৷ এ ঘটনায় পটিয়া থানায় রাজনৈতিক ৭টি মামলা হয়। এ মামলাকে ঘিরে ওসি জায়েদ নুরের বাণিজ্য ছিল । বাণিজ্যের তালিকায় বাদ পড়েনি নিরীহ কোন লোক ও সাংবাদিক। এ ওসি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন পটিয়া থানার কোয়াটারে কিংবা চট্টগ্রাম শহরে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে এ ওসির সম্পর্ক শুরু থেকেই ভালো ছিল না। এর কারণ চুরি, ডাকাতি বন্ধে ব্যর্থ, আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও ওসির ঔদ্ধত্যপূর্র আচরণ। এ ওসিকে পটিয়ার বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা আলটিমেটাম দিলেও তিনি শুনেননি।
অস্ত্র মামলার ওয়ারেন্টের পলাতক আসামী পটিয়ার কচুয়ায় ইউনিয়নের মোহাম্মদ বাবুকে বাদী করে একটি মামলা নেন। এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় হয়৷ পরবর্তীতে সুকৌশলে মোহাম্মদ বাবুকে বিদেশি পাঠিয়ে দেন। পটিয়ায় যেসব রাজনৈতিক মামলা থানায় রের্কড হয়েছে এ মামলাকে পুঁজি করে ওসি জায়েদ নুর কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ ওপটিয়া৷ এজাহারে নাম থাকলে টাকার অংক ছিল বড়। মাঝেমধ্যে আওয়ামী লীগের ২-১জনকে গ্রেফতার করে তিনি বুঝাতেন চান আওয়ামী লীগ বিরোধী। অথচ তিনি পটিয়া থানায় যোগদানের আগে (৫ আগস্টের পুর্বে) চট্টগ্রাম জেলা ডিবির ওসি ছিলেন।
এসময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর বিভিন্নভাবে নিপীড়ন চালিয়েছেন। এর একটি প্রমাণ পটিয়া উপজেলার বিএনপির সাবেক সদস্য খোরশেদ আলম। ওসি জায়েদ নূর ২০-৩০জন পুলিশ নিয়ে বিএনপি নেতা খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করতে চট্টগ্রাম শহরের বাসা ঘিরেন। এ অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন পটিয়া থানার বিতর্কিত ওসি জায়েদ নুর। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে অবশেষে বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় পটিয়া থানা থেকে জায়েদ নুরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পুর্বে ওসি জায়েদ নুর চট্টগ্রাম জেলা ডিবি পুলিশে থাকালীন বিএনপির নেতাকর্মীর উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছিল। টাকা পেলেই তিনি যে কোন মামলা নিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। এখানকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা শুরু থেকে অভিযোগ করেছিল ওসি জায়েদ নুর আসামীদের গ্রেফতার না করে তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। ৫ আগস্ট পটিয়া সদরে ছাত্রদের উপর যারা হামলা করেছিল এদের চিহ্নিত কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এসব অভিযোগ নিয়ে পটিয়া শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা ওসির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন এবং হুশিয়ারি করেন। এরপরও ওসি তার কার্যক্রম বন্ধ করেনি।
গ্রেফতার বাণিজ্যে কোন পুলিশ সদস্য ভুমিকা না রাখলে তাকে থানা থেকে সরিয়ে দিতেন। ওসির নির্দেশে সিভিল পোষাকধারী টিম ধরপাকড় করে বাণিজ্যে থাকতো। এমন কোনদিন নেই পটিয়ায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির, খুন হচ্ছে না। বড় অপরাধ হলেই আবার কৌশলে ধামাচাপা দিত। অপারেশন ডেবিল হান্টের সময়ও বাণিজ্য করার অভিযোগ ওঠেছে। যার কারনে পটিয়ায় উল্লেখযোগ্য কাউকে গ্রেফতার সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়া থানার এক পুলিশ সদস্য জানান, ন্যায় কিংবা অন্যায় হোক কোন পুলিশ সদস্য ওসির কথার বাইরে গেলেই বদলী করার হুমকি দিত। এ ভয়ে থাকতো পুলিশের বেশিরভাগ এসআই, এএসআই।
ছাত্রনেতা আশিকুল মোস্তফা তাইফুল তার ব্যক্তিগত ফেইবুকে লিখেছেন- জুলাই বিপ্লবের এক বছরে পটিয়া থানা প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এখনো তারা দোসরের ভুমিকায় দোসরদের লালন পালন শেল্টারে আছে। ছাত্র জনতার ঐক্য বাংলাদেশ যারা মানতে মারছেন, যারা স্বভাব চরিত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্বা ছাড়াতে পারছেন না। ওসি জায়েদ নুর এর বিরুদ্ধে দায়িত্বপালনে অপেশাদারী আচরণ করেছেন। এ ওসির শাস্তির দাবি জানান।
আঁখি