
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে নাগরিকত্ব বাতিল ও গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন। একইসঙ্গে তার সাবেক উপদেষ্টা ও টেসলার মালিক ইলন মাস্ককেও দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেরত পাঠানোর কথা বলেছেন তিনি।
গত ১ জুলাই ফ্লোরিডার এক অভিবাসী আটক কেন্দ্রে ‘অলিগেটর আলকাট্রাজ’ পরিদর্শনে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, যদি মমদানি নিউ ইয়র্কে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর অভিযান ঠেকান, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি মন্তব্য করেন, “আমাদের দেশে একজন কমিউনিস্টের দরকার নেই।”
উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করা মামদানি ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিক হন। তিনি এর জবাবে বলেন, “আমি কোনো আইন ভঙ্গ করিনি। আমি শুধু চাই না ICE আমাদের প্রতিবেশীদের আতঙ্কিত করুক।”
টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে চিঠি লিখে মমদানির বিরুদ্ধে ডেন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ জানান। তার অভিযোগ মামদানি নাকি “সন্ত্রাসবাদে সহায়তা করা ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন” এবং নাগরিকত্বের সময় তা গোপন করেছেন।
ওগলস উল্লেখ করেন, মামদানি একবার একটি গানে ‘ফ্রি দ্য হোলি ল্যান্ড ফাইভ / মাই গাইজ’ বলে র্যাপ করেছিলেন—যাদের ২০০৮ সালে হামাসকে সহায়তার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ব্যয় ও কর বিল নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। ওই বিল পাসের ফলে বৈদ্যুতিক গাড়িতে করছাড় বাতিল হওয়ায় মাস্কের টেসলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, “সাবসিডি ছাড়া ইলনকে হয়তো দোকান গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরতে হবে। আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। হতে পারে DOGE (সরকারি ব্যয় দক্ষতা বিভাগ) ইলনের উপর নজর রাখবে।”
মার্কিন আইনে কেবলমাত্র প্রমাণিত প্রতারণা, জালিয়াতি, বা সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হলে কোনো ব্যক্তিকে তার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যায়। তবে এটি একটি জটিল ও কঠোর আইনি প্রক্রিয়া।
নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক মাইকেল ক্যাগান বলেন, “এই ধরনের হুমকি রাজনৈতিক বিরোধীদের ভীত করার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। মাস্ক বা মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”
১৯১৭ থেকে ১৯৫০ দশকের "রেড স্কেয়ার" সময়ে বহু মার্কিন নাগরিক বিশেষ করে কমিউনিস্ট ও নাৎসি সমর্থক ডেন্যাচারালাইজেশনের শিকার হন। তবে ১৯৬৭ সালের একটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত বিরল হয়ে উঠেছে।
মাস্ক ও মামদানি—দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং তদের নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য প্রাথমিকভাবে যেসব প্রমাণ থাকা দরকার সেগুলোর অস্তিত্ব নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক চাপ ও বিভাজন তৈরির উদ্দেশ্যেই বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
শিহাব