
সংগৃহীত
রাত ছিল শান্ত। শিশুরা ঘুমোচ্ছিল, বাবা-মায়েরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই নিরবতা ছিন্ন করে হঠাৎই গর্জে উঠল একের পর এক বিস্ফোরণ। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফের ছোড়া হলো একাধিক মিসাইল। আরেকটি নিদারুণ আতঙ্কের রাত পার করল সাধারণ মানুষ।
“আমি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুধু প্রার্থনা করছিলাম” বলছিলেন ৩৬ বছর বয়সী তামার লেভি, যিনি আশদোদ শহরের একটি বেসমেন্টে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর চোখে জল, কণ্ঠে আতঙ্ক “প্রতিবার মনে হয় হয়ত এবারই শেষ!”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজা সীমান্তের দিক থেকে একযোগে বেশ কয়েকটি মিসাইল ছোড়া হয়। তবে আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। কিছু মিসাইল বিস্ফোরণ ঘটায় খোলা মাঠে, একটি স্কুলের কাছাকাছিও পড়েছিল একটি রকেটের টুকরো। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র।
গভীর রাতে হাজারো মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠে ছুটে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে। বয়স্ক নারী-পুরুষ, শিশুরা কাঁদছে—কারণ তারা জানে না পরবর্তী মুহূর্তে কী ঘটবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, পালটা হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, “সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না ইসরায়েল।”
মানবিক বিপর্যয় বাড়ছে এই হামলার পেছনে কে ছিল এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে, হামাস কিংবা ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী এর সঙ্গে জড়িত। প্রতিবারের মতো এবারও সাধারণ মানুষের ওপরই তার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।
একজন মায়ের আর্তি"আমরা রাজনীতি বুঝি না, যুদ্ধ বুঝি না। শুধু জানি আমাদের বাচ্চাদের যেন আর লুকিয়ে রাখতে না হয়, যেন তারা ভয় ছাড়া আকাশ দেখতে পারে।"
এই হামলার শব্দ থেমে গেলেও, মানুষের বুকের ভেতর যেটা বাজতে থাকে, তা হলো—ভয়, শূন্যতা আর অনিশ্চয়তা। রকেটের ধ্বনি থেমে গেলেও শিশুদের কান্না থামে না, মায়েদের প্রার্থনা ফুরায় না। প্রতিবারের মতো এবারও যুদ্ধের বলি সেই সাধারণ মানুষ, যাদের কোনো হাতেই অস্ত্র নেই—আছে শুধু বাঁচার আকুতি।
সমাধান যদি থেকেই যায় কূটনীতির অন্ধ গলিতে, তবে মানবতার এই ক্ষয়রোগ কখনো সারবে না। সময় এসেছে—রাজনীতি নয়, মানুষকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার। কারণ, প্রতিটি মিসাইল মানে একটি ঘুম হারানো রাত, একটি ছিন্ন হৃদয়, একটি কাঁদতে থাকা ভবিষ্যৎ।
হ্যাপী