
ছবিঃ সংগৃহীত
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৩ গুণ—যা অর্থনীতিবিদদের চোখে বিস্ময়কর এবং ভাবনার বিষয়।
২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে জমা আছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁক, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁক ১৫০ টাকা ধরে)। অথচ আগের বছর, ২০২৩ সালে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁক, টাকায় প্রায় ২৬৫ কোটি।
এই তথ্য এসেছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (SNB) বার্ষিক প্রতিবেদনে, যা বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিপুল অর্থ বাংলাদেশি ব্যক্তি নয়, বরং ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
এটা কি শুধুই বৈধ লেনদেন, নাকি পাচার?
সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক গোপনীয়তার জন্য বিখ্যাত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা কিছুটা ছাড় দিয়েছে। তবুও, কারা এই টাকা রেখেছে, কোথা থেকে এসেছে—এসব জানা যায় না।
অনেকের মতে, প্রবাসী বাংলাদেশি বা ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণেও এই টাকা হতে পারে। কিন্তু এই ব্যাখ্যায় একমত নন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তাঁর মতে, এত বড় অঙ্কের অর্থ যদি ব্যবসার কারণে স্থানান্তর হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন আসে—সুইজারল্যান্ড কি বাংলাদেশের কোনো বড় বাণিজ্যিক অংশীদার? উত্তর হলো—না।
তিনি বলেন, “ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা গেছে মানে এটা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশের ভেতর থেকেই পাঠানো হয়েছে। তাহলে এটা কি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে হয়েছে? না হলে সেটা সম্ভবই নয়।”
তাঁর ভাষায়, “৮ হাজার কোটি টাকা কয়েক দিনে ধাপে ধাপে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব—যদি উপর মহলের সহায়তা থাকে। এটা পুরোপুরি টাকা পাচার বলা না গেলেও, খুব স্বচ্ছও নয়।”
ইতিহাস কী বলে?
বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে টাকা যাওয়ার রেকর্ড প্রথম ২০০৬ সালে ১০ কোটি ফ্রাঁক ছাড়ায়। এরপর ২০০৭ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে, এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ২৪ কোটিতে পৌঁছে।
২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে এই অর্থ বৃদ্ধি পেতে থাকে, ২০১৬ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ফ্রাঁকে। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনের বছর আবার বেড়ে যায় ৬১ কোটি ফ্রাঁকে।
২০২৩ সালে হঠাৎ করে এই জমার পরিমাণ ২৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এলেও, এক বছর পরেই আবার রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে।
তাহলে কী বোঝা গেল?
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর মতে, এই বিপুল অর্থের বেশিরভাগই অবৈধভাবে উপার্জিত এবং দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। যদিও কিছু অর্থ বৈধভাবে প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে যেতে পারে, কিন্তু এক বছরে ৩৩ গুণ বাড়া স্বাভাবিক কিছু নয়।
এই ঘটনার পেছনে সুশাসনের ঘাটতি, দুর্বল নজরদারি ও উচ্চপর্যায়ের সুবিধাভোগের বিষয়টি উঠছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, নিয়মের মধ্য দিয়েই অনিয়ম হতে পারে—এটাই তার এক বাস্তব উদাহরণ।
মারিয়া