
ছবি: সংগৃহীত
ইরানে সম্ভাব্য হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে ফের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার) এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “আলেকজান্ডারও পারস্যবাসীকে পরাজিত করতে পারেনি।” তার এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
এর আগে, একই দিন সকালে আরেকটি পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে শি লেখেন, “হ্যালো আমেরিকা, তোমার দিকে প্রেতাত্মা ছুটে আসছে।”
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ৫ হাজার বছরের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, যা আমেরিকা শিখতে অস্বীকার করে। সাম্রাজ্য কখনো শত্রুর আঘাতে ধ্বংস হয় না, তারা ধ্বংস হয় নিজেদের যুদ্ধযন্ত্রের অতৃপ্ত লালসার নিচে পিষ্ট হয়ে।
তিনি ইতিহাস থেকে বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে যুদ্ধবাজ মনোভাব এবং অতিরিক্ত সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এক সময় ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শি লেখেন, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে কিন রাজবংশ যুদ্ধরত রাজ্যগুলোকে একত্র করে চীনকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। তারা বিশাল দেয়াল নির্মাণ করে এবং টেরাকোটা সেনাবাহিনীর গর্ব নিয়ে সাম্রাজ্যের পতাকা ওড়ায়। কিন্তু জনগণকে ক্রমাগত যুদ্ধে ঠেলে দিয়ে তাদের রক্ত নিঃশেষ করায় এই রাজবংশ মাত্র ১৫ বছরেই পতনের মুখে পড়ে।
অষ্টম শতাব্দীর তাং সাম্রাজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসময় এই রাজবংশ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কর আদায় করত। কিন্তু বিজয়ের নেশায় সেনাবাহিনীকে মধ্য এশিয়ার গভীরে অভিযান পরিচালনায় পাঠানো হয়। সেনাদল অতিরিক্ত বিস্তৃত হওয়ায় যখন রাষ্ট্র তাদের রসদ জোগাতে ব্যর্থ হয়, তখনই আন লুশানের নেতৃত্বে বিদ্রোহ দেখা দেয়। রাজধানী চাংআন জ্বলে ওঠে এবং সাম্রাজ্য অপূরণীয় পতনের পথে এগোয়।
১৩ শতাব্দীর মঙ্গোল সাম্রাজ্যের উদাহরণ টেনে শি বলেন, চেঙ্গিস খানের বাহিনী অজেয় মনে হলেও তাদের অবিরাম সম্প্রসারণই রাজ্যকে অস্থির ও দুর্বল করে তোলে। খুব অল্প সময়েই এই সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে।
পুনরায় তিনি বলেন, “৫০০০ বছরের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, সাম্রাজ্য নিজের লোভ ও অস্ত্রের ওপর অতির্ভরতায় ভেঙে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র কি শুনতে পাচ্ছে না সেই পতনের পদধ্বনি?”
তার মন্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রায় ৭৫০টি সামরিক ঘাঁটি দিয়ে পুরো বিশ্বকে ঘিরে রেখেছে। প্রতি বছর তারা ১ ট্রিলিয়ন ডলার সামরিক খাতে ব্যয় করছে—এটি একটি অস্বাভাবিক ও অস্থিতিশীল প্রবণতা।
শেষে শি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা কি ইতোমধ্যে শুনতে পাচ্ছেন সেই প্রেতাত্মার পদধ্বনি, যা আপনার সাম্রাজ্যিক প্যারেডকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে ছুটে আসছে?”
চীনা প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটি শুধু কূটনৈতিক বার্তা নয়, বরং বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে এক স্পষ্ট সতর্কসংকেত।
আসিফ