ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জরুরি বাজেট ও আন্তর্জাতিক সহায়তার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৯ জুন ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জরুরি বাজেট ও আন্তর্জাতিক সহায়তার তাগিদ

ছবি: জনকণ্ঠ

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে "বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জসমূহ" শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কক্সবাজারের সার্কিট হাউস রোডে অবস্থিত অরুণোদয় স্কুলের অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোঃ শামসুদ দৌজা।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কক্সবাজার এর ডিআইজি প্রলয় চিসিম, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আমীর নূর আহমেদ আনোয়ারী, হেল্প কক্সবাজার-এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম, গবেষক ও লেখক নুরুল ইসলাম, কক্সবাজার দায়রা ও জজ আদালতের আইনজীবী সাকি এ কাউসার, সাংবাদিক তৌহিদ বেলাল, উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মকবুল আহমেদ, উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিক আজাদ, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, উপজেলার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, এনজিও প্ল্যাটফর্মের অ্যাক্সেস কো-অর্ডিনেটর মারকো মিলজেভিক এবং বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিগণ।

এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং যুব প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

মোঃ শামসুদ দৌজা বলেন, "দাতা রাষ্ট্রগুলো বিশ্বব্যাপী অন্যান্য মানবিক সংকটে সাহায্য প্রদান করায় রোহিঙ্গা সংকটে তহবিলের শঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে অস্থিরতার কারণে এই মুহূর্তে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। আমরা চাই, মিয়ানমারের পরিস্থিতি দ্রুত স্থিতিশীল হোক এবং প্রত্যাবাসন শুরু হোক।"

প্রলয় চিসিম বলেন, "রোহিঙ্গারা আমাদের পাশে রয়েছে, তাই সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে তাদের নিয়েও চিন্তা করতে হবে। ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে, তবে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তহবিলের সংকটে অনেক প্রকল্প বন্ধ বা স্থগিত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করছি, আশা করি সমস্যাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হবে না।"

মারকো মিলজেভিক বলেন, "এই সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করে সমাধান করতে হবে। সরকার, জাতিসংঘ ও এনজিওসমূহ কাজ করছে, আমাদের উচিত ধৈর্য ধরে মানবিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়া।"

মাহবুবুর রহমান বলেন, "প্রতিদিন রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আমাদের উচিত অন্যান্য দেশে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা।"নূর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, "ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের সাথে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা হওয়া জরুরি।" নুরুল ইসলাম বলেন, "পরিস্থিতির অপেক্ষা না করে এখনই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।"

মকবুল আহমেদ বলেন, "এখন যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে আমরাও সংকটে পড়তে পারি। রোহিঙ্গারা যেন স্থানীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।"

আবুল কাশেম বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে, নয়তো রোহিঙ্গা রেসপন্স ঝুঁকিতে পড়বে। নতুন দাতা খুঁজে বের করাও জরুরি।" শাহাদাত হোসেন বলেন, "তহবিল কমে গেছে, ক্যাম্পে জনসংখ্যা বেড়েছে। এখন সময় একটি বাস্তবসম্মত অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা।"

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক ব্যর্থতা। রোহিঙ্গা সংকট এখন কেবল মানবিক নয়, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর ভূমিকা জরুরি।"

সভায় গুরুত্ব পায়—

  • তহবিল হ্রাসের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাজেট ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন

  • দক্ষতা উন্নয়ন ও বিকল্প আয় উৎস গড়ে তোলা

  • পুনর্বাসন ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালু রাখা

  • সমন্বয় ও কমিউনিটি পুলিশিং শক্তিশালী করা

  • আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও তথ্য প্রচারণা বাড়ানো

  • ভাসানচরের পরিবেশ উন্নয়ন ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা

  • গণমাধ্যমের সচেতনতা বৃদ্ধির ভূমিকা

  • রোহিঙ্গা-স্থানীয় সম্প্রীতির জন্য যৌথ কার্যক্রম

কাওসার/শহীদ

×