
ছবি: সংগৃহীত
বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ, সোনা-রুপার ঝলমলে স্থাপত্য, মনোমুগ্ধকর প্রাসাদ, চোখ ধাঁধানো নকশা—সব মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নের রাজ্য। কিন্তু তবুও পর্যটকদের চোখে প্রায় অচেনা এক দেশ তুর্কমেনিস্তান। মধ্য এশিয়ার কাস্পিয়ান সাগরের পূর্বে অবস্থিত এই রহস্যময় দেশটি পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যবাহী হওয়া সত্ত্বেও পর্যটকদের জন্য যেন এক বন্ধ দুয়ার।
তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাদ বিশ্বে পরিচিত “সাদা মার্বেলের শহর” নামে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সাদা মার্বেলের ভবনসমৃদ্ধ শহর। শহরটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত শৈল্পিক ও দৃষ্টিনন্দন, যা সহজেই যেকোনো পর্যটককে মোহিত করার মতো।
দেশটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভৌগোলিক বিস্ময় হলো দারওয়াজা গ্যাস ক্রেটার, যাকে অনেকে "নরকের দরজা" নামেও চেনে। ১৯৭১ সাল থেকে জ্বলতে থাকা এই গ্যাস গর্ত রাতের আঁধারে এক বিভীষিকাময় সৌন্দর্য তৈরি করে। তবে এর কাছাকাছি যাওয়া কিংবা সেখানে ভ্রমণ করাই অত্যন্ত কঠিন।
তুর্কমেনিস্তান পৃথিবীর অন্যতম বন্ধ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেশটি ভ্রমণ করা অত্যন্ত কঠিন।
*ভিসা পাওয়া দুরূহ, এবং পেলেও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অনুমতি নেই।
*প্রত্যেক পর্যটকের সঙ্গেই থাকতে হয় সরকার অনুমোদিত গাইড।
* অনেক এলাকায় ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ এবং স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগেও রয়েছে বিধিনিষেধ।
এমনকি দেশের নিজস্ব নাগরিকরাও অনেক সময় স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারেন না।
দেশটি আন্তর্জাতিক পর্যটনের প্রয়োজনে উন্নত হোটেল বা রেস্টুরেন্ট অবকাঠামো গড়ে তোলেনি। ফলে যারা ভ্রমণের সুযোগ পান, তাদেরকেও পোহাতে হয় নানা অসুবিধা। যদিও সরকার নাগরিকদের বিনামূল্যে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করে, তবু নাগরিকদের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
তুর্কমেনিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে স্বপ্নের মতো সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, কিন্তু তার দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে বাইরের বিশ্বের জন্য। কঠোর নিয়ন্ত্রণ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও তথ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে এই দেশটি পর্যটকদের চোখে আজও এক রহস্যময় আবছা দ্বীপ।
সৌন্দর্য আছে, ইতিহাস আছে, বৈচিত্র্য আছে—তবু বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে তুর্কমেনিস্তান এখনো এক নিস্তব্ধ, নিঃসঙ্গ প্রান্তর।
ছামিয়া