
ছবি: সংগৃহীত।
আমাদের শরীরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে দেয় জিহ্বা। বহু শতাব্দী ধরেই ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাবিদ্যা এবং চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়ের জন্য জিহ্বা পরীক্ষা করে আসছেন। জিহ্বার রঙ, টেক্সচার, আকৃতি এবং তার ওপর থাকা আবরণের পরিমাণ শরীরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই জিহ্বার মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া ৫টি সতর্কতামূলক সংকেত যা আপনার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নির্দেশ করতে পারে।
১. জিহ্বার রঙে পরিবর্তন:
স্বাভাবিক জিহ্বার রঙ হওয়া উচিত হালকা গোলাপী থেকে গাঢ় গোলাপী পর্যন্ত। হঠাৎ রঙ পরিবর্তন হলে তা স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে:
উজ্জ্বল লাল: সংক্রমণ, জ্বর, উদ্বেগ বা ভিটামিন বি-র অভাবের লক্ষণ।
ফ্যাকাশে: রক্তাল্পতা বা পুষ্টির অভাব নির্দেশ করে।
নীলাভ বা বেগুনি: রক্ত সঞ্চালন বা হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
হলুদ আবরণ: পাচনতন্ত্র বা যকৃতের সমস্যা হতে পারে।
রঙের এই পরিবর্তন লক্ষ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. জিহ্বার অস্বাভাবিক আবরণ:
জিহ্বার ওপর স্বাভাবিকভাবেই মৃত কোষ এবং ব্যাকটেরিয়ার পাতলা স্তর থাকে। তবে যদি আবরণ ঘন, ফাঁকা বা অদ্ভুত রঙের হয়, তাহলে সাবধান:
সাদা আবরণ: ওরাল থ্রাশ (ফাঙ্গাল সংক্রমণ) বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
হলুদ বা সবুজ আবরণ: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা পাচনতন্ত্রের সমস্যা ইঙ্গিত।
কালো ও লোমযুক্ত জিহ্বা: সাধারণত খারাপ মৌখিক স্বাস্থ্য, ধূমপান বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিতও হতে পারে।
আবরণ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা রঙ বদলায়, দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
৩. জিহ্বা ফুলে যাওয়া বা বড় হওয়া:
ফোলা বা অতিরিক্ত বড় জিহ্বা এলার্জি, সংক্রমণ বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার চিহ্ন হতে পারে।
ফোলা: এলার্জি, সংক্রমণ বা হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে হতে পারে।
জিহ্বার ওপর পাপিল্লার (ছোট ছোট গঠন) অপসারণ: ভিটামিন বিশেষ করে বি ভিটামিন বা আয়রনের অভাবের লক্ষণ।
অস্বাভাবিক আকৃতি বা ফোলা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
৪. জিহ্বার ধারের দাঁতের ছাপ বা দাগ:
যখন জিহ্বা ফোলা থাকে তখন দাঁতের দাগ বা ছাপ দেখা যায়, যাকে "স্ক্যালোপড টং" বলা হয়। এটি হতে পারে:
উদ্বেগ বা চাপের কারণে জিহ্বা কষানোর প্রতিফলন।
থাইরয়েড সমস্যার সংকেত।
শরীরে তরল ধরে রাখার কারণে।
ছোট দাগ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসা প্রয়োজন।
৫. জিহ্বায় লাল দাগ বা ঘা:
লাল দাগ, প্যাচ বা ব্যথাযুক্ত ঘা সংক্রমণ, জ্বালা-জ্বুরি বা গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।
লাল দাগগুলি প্রদাহ বা ভিটামিনের অভাব নির্দেশ করতে পারে।
ব্যথাযুক্ত ঘা সংক্রমণ, আঘাত বা অটোইমিউন রোগের কারণে হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী গিঁট বা রঙ পরিবর্তনের জন্য ক্যান্সার ও প্রাক-ক্যান্সার অবস্থার জন্য পরীক্ষা জরুরি।
নিয়মিত দাঁত চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব সংকেতের প্রাথমিক সনাক্তকরণ সম্ভব।
জিহ্বার স্বাস্থ্য রক্ষা কিভাবে করবেন?
ভাল মৌখিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা জরুরি। দাঁত মাজার সময় নরম হাতে জিহ্বা মুছুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
জিহ্বা একটি সহজ অথচ কার্যকর উপায় আপনার শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য দেয়। নিয়মিত নিজে লক্ষ্য রাখলে পুষ্টির ঘাটতি, সংক্রমণ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রাথমিক সংকেত সনাক্ত করা যায়।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান