ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

ইউরিক অ্যাসিড বাড়ছে অজান্তেই? প্রতিদিনের ৫টি সহজ অভ্যাসেই মিলবে মুক্তি!

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ৪ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৯, ৪ আগস্ট ২০২৫

ইউরিক অ্যাসিড বাড়ছে অজান্তেই? প্রতিদিনের ৫টি সহজ অভ্যাসেই মিলবে মুক্তি!

ছবি: সংগৃহীত।

শরীরে ইউরিক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা খাবারের মধ্যে থাকা পিউরিন নামক যৌগ ভাঙার মাধ্যমে তৈরি হয়। সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড রক্তে মিশে যায় এবং কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তবে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা গাউট, জয়েন্টে ব্যথা এবং কিডনিতে পাথরের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে দৈনন্দিন কিছু সহজ অভ্যাসে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চলুন জেনে নিই, ইউরিক অ্যাসিড কমাতে কার্যকর ৫টি সহজ দৈনন্দিন অভ্যাস—

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
শরীর ইউরিক অ্যাসিড বের করতে পানি ব্যবহার করে। কিডনি যদি ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকে, তাহলে ইউরিক অ্যাসিড নির্গমন আরও কার্যকর হয়। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যাঁরা পানি খেতে ভুলে যান, তাঁরা সবসময় একটি বোতল সঙ্গে রাখুন এবং অল্প অল্প করে চুমুক দিন। তবে মিষ্টিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান কিডনিকে সুস্থ রাখে এবং কিডনিতে পাথরসহ ইউরিক অ্যাসিড সংশ্লিষ্ট জটিলতা কমায়।

২. উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার সীমিত করুন:
কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। অতিরিক্ত পিউরিনযুক্ত খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। যেমন: লাল মাংস, কলিজা বা যকৃৎ, শামুকজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত মাছ এবং কিছু ডাল। এদের পরিবর্তে কম পিউরিনযুক্ত খাবার বেছে নিন, যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, ফল, সবজি ও পুরো শস্য। পুরোপুরি বাদ না দিয়ে পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খাদ্য পরিকল্পনায় কম পিউরিনযুক্ত উপাদান রাখলে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য উপকার মেলে।

৩. চিনি ও অ্যালকোহল কমান:
ফ্রুকটোজ সমৃদ্ধ মিষ্টিযুক্ত পানীয় ও অ্যালকোহল ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায় এবং নির্গমন প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে বিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর, কারণ এতে পিউরিন থাকে। কোমল পানীয়, মিষ্টি জুস এবং অ্যালকোহল যতটা সম্ভব কমিয়ে আনুন। কারণ, অ্যালকোহল শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, ফলে ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক আকারে জমে যেতে পারে। এর পরিবর্তে পানি বা হারবাল টি পান করুন। চিনি ও অ্যালকোহল কম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন অসুস্থতার ঝুঁকিও কমে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও ব্যায়াম করুন:
বেশি চর্বিযুক্ত দেহে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায় এবং তা শরীর থেকে বের করাও কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন কমালে ইউরিক অ্যাসিডও নিয়ন্ত্রণে আসে এবং গাউটের ঝুঁকি কমে। হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং মতো হালকা ব্যায়াম বেছে নিন, কারণ অতিরিক্ত কঠিন ব্যায়ামে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে। ব্যায়াম রক্ত চলাচল বাড়ায়, টক্সিন দূর করে এবং জয়েন্টের সুরক্ষা দেয়।

৫. ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ খাবার খান:
কিডনি ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে ভিটামিন সি ব্যবহার করে। তাই প্রতিদিন ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার, যেমন: মালটা, কমলা, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম ও ব্রকোলি খেতে হবে। এছাড়া চেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ ও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় টার্ট চেরি জুস বা চেরি রাখুন। এসব প্রাকৃতিক খাবার ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। রঙিন ফল ও সবজির বৈচিত্র্যময় তালিকা আপনার শরীরকে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ করে।

ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুললে ইউরিক অ্যাসিড সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিয়মিত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম ও চিনি-অ্যালকোহল বর্জন আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×