
ছবিঃ সংগৃহীত
আমরা সাধারণত ভাবি বয়স এক ধারাবাহিক, বছরে বছরে বাড়ে। তবে এক যুগান্তকারী গবেষণা বলছে, বার্ধক্য সরলরৈখিক নয়, বরং বয়স ৫০-এর কাছাকাছি এক "টার্নিং পয়েন্টে" হঠাৎ করেই শরীরের বয়স বাড়ার গতি বেড়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রক্তনালী ও অ্যাডরিনাল গ্রন্থি।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা জানিয়েছে, মানুষের শরীরের টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বার্ধক্য ৫০ বছর বয়সে হঠাৎ গতি পায়। এই গবেষণাটি চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এবং প্রোটিনের মাধ্যমে বয়স নির্ণয়ের জন্য "প্রোটিওমিক ক্লক" ব্যবহার করে।
গবেষণার মূল বিষয়গুলো হলো:
অন্তর্দৃষ্টি কী বলে?
গবেষকরা ১৪ থেকে ৬৮ বছর বয়সী ৭৬ জন অঙ্গদাতার শরীর থেকে সংগৃহীত টিস্যু নমুনা বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে শরীরে সবচেয়ে বড় প্রোটিনগত পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে প্রধান ধমনী (এওর্টা)-তে।
তারা ৭টি শরীরতন্ত্রের নমুনা নেন—কার্ডিওভাসকুলার (হৃদয় ও ধমনী), হজমতন্ত্র, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা, হরমোনতন্ত্র (অ্যাডরিনাল গ্রন্থি ও চর্বি), শ্বাসতন্ত্র, ত্বক এবং পেশি।
এই বিশ্লেষণে ৪৮টি প্রোটিন শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর স্তর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে এবং যেগুলো হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা, টিস্যু ক্ষয় ও ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
স্মরণযোগ্য ফলাফল:
-
সবচেয়ে আগে বার্ধক্য শুরু হয় অ্যাডরিনাল গ্রন্থিতে—৩০ বছর বয়সেই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করে।
-
৫০ বছর বয়সে এওর্টা, প্লীহা ও অগ্ন্যাশয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়।
-
৫৫-এর পর পেশি ও ত্বক দুর্বল হতে শুরু করে।
বিষয়টি যাচাই করা হয় কীভাবে?
গবেষকরা একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন (GAS6), যা বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়, তা বেছে নিয়ে এটি একটি তরুণ ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করান। এতে দেখা যায়, ইঁদুরটির শক্তি কমে যায়, ভারসাম্য ও দৌড় ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং স্পষ্টভাবে বয়স বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা দেয়।
বয়সের তরঙ্গ এবং শরীরের ক্লক:
গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে শরীরের বয়স বাড়ে তরঙ্গাকারে, অর্থাৎ হঠাৎ করে পরিবর্তন ঘটে। স্ট্যানফোর্ডের বিজ্ঞানীরাও এর আগে ২৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ১,৩৫,০০০ এর বেশি অণু ও জীবাণু বিশ্লেষণ করে বয়স ৪৪ এবং ৬০-এ এমন আকস্মিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন।
কীভাবে ধীর করা যায় বার্ধক্য?
বার্ধক্য পুরোপুরি থামানো না গেলেও তা বিলম্বিত করা যায়। কী করবেন:
-
মধ্য বয়স থেকেই সচেতন হোন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করুন বয়স ৫০ হওয়ার আগেই।
-
ধমনী ও হৃদয়ের যত্ন নিন: কম চর্বি, বেশি আঁশ, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবার খান: বেরি, গ্রিন টি, হলুদ ও পালং শাক ইত্যাদি।
-
হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ঘুম, পুষ্টি ও মানসিক চাপ কমিয়ে এন্ডোক্রাইন সিস্টেম ঠিক রাখা জরুরি।
-
জৈব বয়স পর্যবেক্ষণ করুন: এখন এমন টেস্টিং কিট পাওয়া যাচ্ছে যা আপনার জৈবিক বয়স বলে দেয়—জেনে নেওয়া যায় আপনার শরীরের প্রকৃত বয়স কত দ্রুত বাড়ছে।
উপসংহার
গবেষণার তথ্য থেকে একথাই স্পষ্ট যে বার্ধক্য ধীরে ধীরে নয়, বরং জীবনের মাঝামাঝি সময় হঠাৎ গতি পায়। এ কারণে পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগেই সুস্থ জীবনচর্চা শুরু করা উচিত। বিজ্ঞান এখন এই প্রোটিন-নির্ভর গবেষণার মাধ্যমে বার্ধক্য রোধে টার্গেটেড চিকিৎসা আবিষ্কারে অগ্রসর হচ্ছে।
ইমরান