ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ শুরু করলো জাপান

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ৩ আগস্ট ২০২৫

এবার মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ শুরু করলো জাপান

ছবিঃ সংগৃহীত

জরুরি চিকিৎসা ও রক্ত সংকট নিরসনে যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে এগোচ্ছে জাপান। দেশটির নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরোমি সাকাইয়ের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত সার্বজনীন কৃত্রিম রক্ত (Universal Artificial Blood)-এর মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

নিউজউইকের বরাতে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো এই কৃত্রিম রক্ত মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। সর্বমোট ১৬ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবককে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার পরিমাণ কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে এখন এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হবে—বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলে এটি আরও বিস্তৃতভাবে ব্যবহারযোগ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গবেষকরা।

দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ এবং সার্বজনীন
এই কৃত্রিম রক্ত সব ধরণের রক্তগ্রুপের জন্য ব্যবহারযোগ্য। সংরক্ষণযোগ্যতা প্রায় দুই বছর পর্যন্ত, যেখানে সাধারণ রক্ত মাত্র ৪২ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণযোগ্য। এটি বানানো হয়েছে রক্তদাতাদের মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত থেকে হিমোগ্লোবিন সংগ্রহ করে এবং তা লিপিড আবরণে আবদ্ধ করে। ফলে এটি প্রাকৃতিক রক্তকণিকার মতো অক্সিজেন বহনে সক্ষম হলেও এতে রক্তগ্রুপ নির্ধারণকারী অ্যান্টিজেন থাকে না—ফলে সকলের জন্য উপযুক্ত ও ভাইরাসমুক্ত।

বিশ্বব্যাপী রক্ত সংকটের সমাধানে সম্ভাবনা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১১.৮ কোটি রক্তদান সংগৃহীত হয়, যার ৪০ শতাংশই উচ্চ আয়ের দেশগুলো থেকে আসে, অথচ তারা বিশ্বের মাত্র ১৬ শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে।

এমন বৈষম্যের কারণে নিম্ন আয়ের অনেক দেশেই পর্যাপ্ত রক্তের সরবরাহ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনা বা প্রসবকালীন পরিস্থিতিতে এই সংকট প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। কৃত্রিম রক্ত এসব অঞ্চলে জীবন বাঁচাতে একটি কার্যকর, নিরাপদ এবং সর্বজনগ্রাহ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

২০২২ সালের গবেষণার ধারাবাহিকতা
২০২২ সালে এই গবেষণা দল হিমোগ্লোবিন ভেসিকেলসের কার্যকারিতা নিয়ে পূর্বে একটি গবেষণা চালিয়েছিল, যেখানে দেখা যায়, এটি প্রাকৃতিক রক্তকণিকার মতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। তখন কিছু ক্ষেত্রে জ্বর বা চুলকানির মতো সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও সেগুলো দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আসে।

এই উদ্ভাবন শুধু রক্তসংকটে নয়, বরং পশ্চিমা প্রযুক্তি-নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা ব্যবস্থার একচেটিয়াত্ব ভাঙতেও সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রঃ https://www.tasnimnews.com/en/news/2025/08/02/3366997/japan-begins-human-trials-of-universal-artificial-blood

ইমরান

×