ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

রাফাল থেকে তেজস পর্যন্ত, কী কী যুদ্ধবিমান আছে ভারতে?

প্রকাশিত: ১৭:১২, ৩ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৭:১৩, ৩ আগস্ট ২০২৫

রাফাল থেকে তেজস পর্যন্ত, কী কী যুদ্ধবিমান আছে ভারতে?

ছবি: জনকণ্ঠ

ভারতের আকাশ সীমা পাহারা দেয় এক বিশাল ও বৈচিত্র্যময় যুদ্ধবিমান বহর। ফ্রান্স থেকে আনা রাফাল থেকে শুরু করে দেশেই তৈরি তেজস—প্রতিটি বিমানের পেছনে আছে একটি করে গল্প। যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তির অগ্রগতি, এবং দেশের প্রতিরক্ষা কৌশলের বিবর্তনের সঙ্গে এগুলো যেন মিশে গেছে।

চলুন, দেখি কোন যুদ্ধবিমান কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোথা থেকে শুরু করে আজ কোথায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী।

রাফাল: আধুনিকতার প্রতীক, যুদ্ধেও প্রমাণিত
ভারতের বর্তমান সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান হচ্ছে ফরাসি দাসোঁ রাফাল। ২০১৬ সালে কেনা এই ফাইটার বিমান ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ভারতের আকাশে উড়ে।
এর কাছে আছে Meteor নামের দূর পাল্লার মিসাইল, অত্যাধুনিক রাডার এবং ক্রুজ মিসাইল SCALP।
২০২২ সালে সীমান্ত উত্তেজনার সময় ভারতের প্রতিরোধের শক্তি হিসেবেই আকাশে পাঠানো হয় রাফালকে। এটা শুধু একটি বিমান না, বরং ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।

Su-30MKI: ভরসার অন্য নাম
Su-30MKI যুদ্ধবিমানকে বলা যায় ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার মেরুদণ্ড। ভারতে তৈরি হয়েছে ২৭০টির বেশি।
এটি শুধু আকাশে লড়াই করতে পারে না, মাটির উপর আঘাত হানারও সামর্থ্য রাখে।
২০১৯ সালে বালাকোট অভিযানে যদিও এটি সরাসরি গোলা ছোড়েনি, কিন্তু সর্বক্ষণ টহল দিয়ে আকাশ পাহারা দিয়েছে।

মিরাজ ২০০০: পুরোনো হলেও এখনো কার্যকর
৮০’র দশকে যুক্ত হওয়া ফরাসি মিরাজ ২০০০ এখনো কাজ করছে।
১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের বালাকোটে সঠিক নিশানায় বোমা ফেলায় এটি কিংবদন্তি হয়ে ওঠে।
কিছুটা পুরনো হলেও, আধুনিকীকরণে এটি আজও আকাশে ভরসা।

তেজস: ভারতের নিজের হাতে গড়া গর্ব
তেজস ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান।
২০১৬ সালে এটি বিমানবাহিনীতে যোগ দেয়। এখনো কোনো যুদ্ধে অংশ না নিলেও এর গুরুত্ব অন্য জায়গায়—ভারত যেন ভবিষ্যতে আর বিদেশি যুদ্ধবিমানের উপর নির্ভর না করে।
এটি ছোট, হালকা ও দ্রুতগতি সম্পন্ন।

MiG-29 ও Jaguar: নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ, তবে সীমাবদ্ধ
MiG-29 মূলত আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য, আর Jaguar নিচু দিয়ে উড়ে ভূমিতে আঘাত হানার জন্য।
দুটোই এখন কিছুটা পুরনো, তবে নিয়মিত ব্যবহার চলছে।
যুদ্ধে এদের ভূমিকাও কমে এসেছে, কিন্তু এখনও কাজে লাগানো হয় প্রশিক্ষণ ও টহলে।

MiG-21: যুদ্ধক্ষেত্রের প্রাচীন বীর
৬০’র দশকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই যুদ্ধবিমান এক সময় ভারতের প্রধান ভরসা ছিল।
১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ, এমনকি ২০১৯ সালে পাকিস্তানি F-16 গুলি করে ভূপাতিত করার কৃতিত্বও এই বিমান পেয়েছে।
তবে বারবার দুর্ঘটনার কারণে এটি পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘ফ্লাইং কফিন’ নামে। এখন ধীরে ধীরে অবসরের পথে।

পুরোনো আর নতুনের মেলবন্ধন
ভারতের যুদ্ধবিমান বহর যেন একটি চলমান গল্প। কিছু যুদ্ধবিমান একেবারে নতুন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। আবার কিছু আছে, যারা পুরনো দিনের সাক্ষী।
একদিকে যেমন রাফাল আর Su-30MKI সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়, অন্যদিকে তেজস জাতীয় আত্মনির্ভরতার প্রতীক।
পুরনো মিরাজ, Jaguar বা MiG-29 এখনো কাজ করে যাচ্ছে নির্দিষ্ট ভূমিকায়।

সব মিলিয়ে এটা শুধুই যুদ্ধবিমান নয়—এটা ভারতের প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাসের উড়ন্ত দলিল।
 

মারিয়া

×