
ছবি: জনকণ্ঠ
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যুক্ত করার স্বপ্নে আবারও ধাক্কা লাগলো। একদিকে, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি AMCA (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট) এখনও অনেক দেরি, অন্যদিকে আমেরিকার F-35 এবং রাশিয়ার Su-57—এই দুটি বিকল্পই এখন ভারতের জন্য অনিশ্চিত।
F-35 নিয়ে ভারতের স্পষ্ট বার্তা: "আমরা আগ্রহী নই"
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত স্পষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা Lockheed Martin-এর তৈরি F-35A স্টিলথ যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অথচ কয়েক মাস আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিমান ভারতে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
কিন্তু এরপরই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ২৫% শুল্ক বসিয়ে দেয়। ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ভারতের শুল্কনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভারতের মতো কঠিন শুল্কনীতি আর কোনো দেশের নেই,” এবং ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়েও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন।
"F-35 আদৌ কোনও বাস্তব প্রস্তাবই ছিল না" — বলছেন সাবেক এয়ার মার্শাল
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া বলেন, “F-35 নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি—না কোনও দরপত্র, না আলোচনা। ফলে এটাকে প্রকৃত প্রস্তাব বলা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের উচিত এখনই কোনো বিদেশি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা বন্ধ রাখা। বরং আমাদের নিজস্ব AMCA প্রকল্পে গতি আনতে হবে—বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে, প্রয়োজন হলে পশ্চিমা দেশ থেকে প্রযুক্তি এনে এবং দ্রুত উৎপাদনে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”
Su-57: রাশিয়ার লোভনীয় প্রস্তাব, কিন্তু বিপদের আশঙ্কাও আছে
রাশিয়ার Rosoboronexport ভারতের কাছে Su-57E স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, এই বিমান ভারতে যৌথভাবে তৈরি করা যেতে পারে এবং Su-30MKI-এর যে কারখানাগুলো আগে থেকেই কাজ করছে, সেগুলোই Su-57E উৎপাদনে অংশ নিতে পারবে। এটা ভারতের জন্য আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে সুবিধাজনক।
তবে বিষয়টা এখানেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার সমালোচনা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি ভারত Su-57 নেয়, তাহলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে।
চীন-পাকিস্তান এগিয়ে যাচ্ছে, ভারত পিছিয়ে?
চীন ইতিমধ্যে দুটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান (J-20 ও J-35A) পরিচালনা করছে এবং তারা ষষ্ঠ প্রজন্মের বিমান নিয়েও গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। পাকিস্তানও চীন থেকে ৪০টি J-35A কেনার প্রাথমিক ঘোষণা দিয়েছিল, যদিও পরবর্তী সময়ে তারা তা কিছুটা গোপন রেখেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, যদি ভারতের AMCA প্রকল্প বাস্তবে রূপ নিতে আরও ১০ বছর সময় নেয়, তবে চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের আকাশ শক্তিতে বড় ধরনের ফাঁক তৈরি হবে।
সাময়িকভাবে কি Rafale-ই ভরসা?
ভারতীয় বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ২৯টি—যেখানে আদর্শ সংখ্যা ৪২। এই ঘাটতি পূরণে এখনই কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে যুদ্ধ সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
তাই অনেক বিশেষজ্ঞই এখন বলছেন, পুরোপুরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ বিমানের দিক না গিয়ে, আপাতত Rafale-এর মতো আধুনিক ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ওপর জোর দেওয়া উচিত। কারণ, বাস্তব যুদ্ধে সংখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ, শুধু প্রযুক্তি নয়।
ভারতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—একদিকে প্রযুক্তিগত আধুনিকতা অর্জন, অন্যদিকে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। F-35-এর মতো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিমান পাওয়া না গেলেও, নিজেদের AMCA প্রকল্পে যদি গতি আনা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ভারত নিজেই হয়ে উঠতে পারে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির এক বিশ্বস্ত উৎস।
এখন প্রশ্ন একটাই—ভারত এই সংকটকে কিভাবে সুযোগে পরিণত করবে?
মারিয়া