
ছবিঃ সংগৃহীত
একটি শিশুর জন্মই ইতিহাস গড়লো। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই জন্ম নেওয়া থাডিউস ড্যানিয়েল পিয়ার্স নামের এই নবজাতককে ধরা হচ্ছে বিশ্বের ‘সবচেয়ে পুরোনো’ শিশু হিসেবে—বয়সে নয়, বরং তার উত্স বা ভ্রূণের বয়স অনুসারে।
থাডিউসের ভ্রূণটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল সেই ভ্রূণটি। এতদিন পরে একটি সুস্থ-সবল শিশুর জন্মে তা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক ব্যতিক্রমী অর্জনে রূপ নিয়েছে।
৩০ বছর আগের ‘তিনটি ছোট্ট আশা’
থাডিউসের জৈবিক মা লিন্ডা আচার্ড ৯০-এর দশকে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) ছিল তখনও নতুন ও বিতর্কিত প্রযুক্তি। তিনি চারটি ভ্রূণ তৈরি করেন। এর মধ্যে একটি থেকে তাঁর কন্যা জন্মায়। বাকি তিনটি তিনি হিমায়িত করে সংরক্ষণ করে রাখেন। সেই ভ্রূণগুলো তিনি নাম দিয়েছিলেন “আমার তিনটি ছোট্ট আশা।”
ভ্রূণ ফেলে না দিয়ে দান করার সিদ্ধান্ত
সময় চলে যায়। মেয়েটি বড় হয়ে নিজের সন্তানও জন্ম দেয়। লিন্ডা তখন মেনোপজে। কিন্তু ভ্রূণগুলোকে ফেলে দেননি। কারণ, তিনি সেগুলোকে নিজের মেয়ের ‘ডিএনএ ভাইবোন’ হিসেবে দেখতেন। অবশেষে তিনি খুঁজে পান ‘স্নোফ্লেকস এমব্রায়ো অ্যাডপশন’ নামের একটি বিশেষ কর্মসূচি, যেখানে ভ্রূণ দাতা ও গ্রহণকারীর মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।
৭ বছরের লড়াইয়ের পর এক অলৌকিক সমাপ্তি
ওহাইওর দম্পতি টিম ও লিন্ডসে পিয়ার্স সাত বছর ধরে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে লিন্ডসে ‘স্নোফ্লেকস’ কর্মসূচির খোঁজ পান এবং তাদেরকে লিন্ডার ভ্রূণ দেওয়া হয়। তারা বয়স বা উৎস নির্বিশেষে যেকোনো ভ্রূণ গ্রহণে রাজি ছিলেন।
তিনটি হিমায়িত ভ্রূণ পুনরায় উষ্ণ করতে হয় অত্যন্ত সতর্কভাবে। সেই সময় ব্যবহৃত ‘স্লো-ফ্রিজিং’ পদ্ধতি ছিল জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে রিওজ ফার্টিলিটি ক্লিনিকের এমব্রায়োলজিস্ট সারাহ অ্যাটকিনসনের সঠিক দক্ষতায় সবগুলো ভ্রূণই অক্ষত থাকে।
লিন্ডসির গর্ভে দুটি ভ্রূণ স্থানান্তর করা হয়। একটি ভ্রূণ সফলভাবে বেড়ে ওঠে—সে-ই থাডিউস ড্যানিয়েল পিয়ার্স।
এক নতুন অধ্যায়, বিজ্ঞানের এক মাইলফলক
থাডিউসের জন্ম শুধুমাত্র এক ব্যক্তিগত আনন্দের মুহূর্ত নয়, বরং এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী উদাহরণ। এর আগে ভারতে ৭৪ বছর বয়সে এক নারী যমজ সন্তান জন্ম দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন, আবার গ্রিসে তিন জনের ডিএনএ দিয়ে একটি শিশু জন্ম হয়েছিল বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
এইসব ঘটনা দেখিয়ে দেয়, আধুনিক বিজ্ঞান কিভাবে মা হওয়ার পথকে আরো বিস্তৃত ও সম্ভব করে তুলছে।
থাডিউসের জৈবিক মা লিন্ডা বলেন, “শিশুটিকে একদিন সামনে থেকে দেখাটা আমার জন্য হবে স্বপ্নপূরণের মতো।” যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের পরিকল্পনা নেই।
এই শিশু প্রমাণ করলো, আশা যত দীর্ঘই সময় হোক না কেন, ঠিকই একদিন বাস্তব রূপ নেয়।
ইমরান