
বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক নির্ণীত ক্যানসার হলো প্রোস্টেট ক্যান্সার। মৃত্যুর কারণ হিসেবে এটি পঞ্চম স্থানে রয়েছে। কিন্তু এই ভয়ানক রোগের শুরুটা হয় নীরবেই কোনো তীব্র সংকেত বা চোখে পড়ার মতো উপসর্গ ছাড়াই।
প্রাথমিক অবস্থায় রোগের লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম ও সাধারণ মনে হয় যে অধিকাংশ পুরুষই সেগুলোকে গুরুত্ব দেন না। কখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে বাথরুমে যাওয়া, কখনো প্রস্রাব শুরু করতে সামান্য সময়ক্ষেপণ, আবার কখনো তলপেটে এক মুহূর্তের জন্য অস্বস্তি এসব কিছুই ‘স্বাভাবিক’ বলে ভেবে নেওয়া হয়। কিন্তু এই সাধারণ ঘটনাগুলোর আড়ালে শরীর হয়তো সংকেত দিচ্ছে আরও গুরুতর কিছু সমস্যার।
চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রোস্টেট ক্যান্সারের এমন ৬টি প্রাথমিক লক্ষণ যা অনেক সময়ই অজান্তেই এড়িয়ে যাওয়া হয়।
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব: শুধুই কি বয়সের কারণে?
রাতে একাধিকবার প্রস্রাব করতে ঘুম ভাঙা অনেকেই বয়সের স্বাভাবিক পরিণতি বলে ভাবেন। যদিও বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে ‘নকচুরিয়া’ বলা হয়, এবং এটি প্রোস্টেট সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে।
প্রোস্টেট বড় হলে বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তা মূত্রনালিতে চাপ সৃষ্টি করে, ফলে মূত্রত্যাগে ব্যাঘাত ঘটে। হঠাৎ করে এ সমস্যা শুরু হলে কিংবা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রস্রাব শুরু করতে বিলম্ব
প্রস্রাব শুরু করার সময় যদি মনে হয় যেন কোন অদৃশ্য ‘পজ বাটন’ চাপা হয়েছে, তাহলে সেটিও হতে পারে একটি সতর্কবার্তা।
প্রোস্টেট ক্যান্সার ইউরেথ্রার চারপাশের পেশিকে শক্ত করে তোলে কিংবা দুর্বল করে দেয়, ফলে প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। মাঝে মাঝে এমন হলে সমস্যা না হলেও, নিয়মিতভাবে হলে বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয়।
প্রস্রাবের ধারা দুর্বল বা বিঘ্নিত হওয়া
যখন প্রস্রাবের ধারা আগের তুলনায় দুর্বল হয়ে যায়, অথবা মাঝে মাঝেই আটকে যায়, তখন অনেকেই ধরে নেন এটি পানিশূন্যতা বা সাময়িক কিছু।
কিন্তু প্রোস্টেটে টিউমার থাকলে তা ইউরিনারি ট্র্যাক্টে আংশিক বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রস্রাবের গতি ব্যাহত হয়। যদিও এতে ব্যথা হয় না, তবে এটি হতে পারে অদৃশ্য কোনো বিপদের পূর্বাভাস।
মূত্রথলি পুরোপুরি খালি না হওয়ার অনুভূতি
প্রস্রাব শেষ করার পরেও যদি মনে হয় পুরোপুরি খালি হয়নি, তাহলে সেটিও হতে পারে প্রোস্টেটজনিত পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
প্রোস্টেট বড় হলে বা আকৃতির পরিবর্তন ঘটলে তা ব্লাডার বা ইউরেথ্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে কিছু মূত্র থেকে যেতে পারে এবং বারবার মূত্রত্যাগের অনুভূতি হতে পারে, যদিও প্রকৃতপক্ষে তা প্রয়োজন না-ও হতে পারে।
প্রস্রাবের সময় হালকা ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
প্রস্রাব করার সময় যদি মাঝেমধ্যে হালকা জ্বালা বা ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে অনেকেই সেটিকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা পানিশূন্যতার ফল বলে ধরে নেন।
তবে এই অস্বস্তি প্রোস্টেট ক্যানসারজনিত প্রদাহের কারণেও হতে পারে। যদি এ ধরনের জ্বালা দীর্ঘস্থায়ী হয় কিংবা চিকিৎসায় সেরে না ওঠে, তবে অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত।
মূত্র বা বীর্যে রক্ত দেখা
প্রস্রাব বা বীর্যে অল্প পরিমাণ রক্ত দেখা মানে তীব্র ভয়ের কারণ নয়, তবে এটি কখনোই অবহেলার বিষয় নয়।
প্রোস্টেটের পরিবর্তন জনিত কারণে এমন হতে পারে। যদিও এটি খুব সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ নয়, তবে একবারও যদি এমন কিছু দেখা যায়, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যদি এর পেছনে অন্য কোনো ব্যাখ্যা না থাকে।
অকারণে পেলভিকে অস্বস্তি বা কোমরে ব্যথা
তলপেট বা কোমরে মাঝে মাঝে এক ধরনের চাপা ব্যথা অনুভব করা যেতে পারে, যেটা হয়তো কেউ খারাপ বসার ভঙ্গি বা পেশির টান বলেই ধরে নেন। তবে প্রোস্টেট ক্যান্সার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রদাহ বা অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে এই ব্যথা দেখা দিতে পারে। যদি এটি বারবার ফিরে আসে কিংবা ক্রমশ তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
প্রোস্টেট ক্যান্সার শুরুতে কোনো বড় সংকেত দেয় না। এটি নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে এবং সাধারণ উপসর্গের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। আর এটাই একে আরও বেশি বিপজ্জনক করে তোলে।তাই নিজের শরীরের ক্ষুদ্র পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্ব দিন। যেগুলো "স্বাভাবিক" মনে হয়, সেগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে বড় কোনো সমস্যা। সময়মতো সচেতনতা এবং চিকিৎসাই হতে পারে প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে সুরক্ষার প্রথম ধাপ।
সূত্র:https://tinyurl.com/yw4pmujz
আফরোজা