
ছবিঃ সংগৃহীত
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যে রেক্টাল ক্যানসারের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়াদের তুলনায় চারগুণ বেশি। গবেষকরা বলছেন, এই ঊর্ধ্বমুখী হার জিনগত নয়, বরং পরিবেশ ও জীবনযাত্রাজনিত কারণেই এমনটা হচ্ছে।
কেন বাড়ছে এই ক্যানসারের ঝুঁকি?
যুক্তরাষ্ট্রের ডানা-ফারবার ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি ব্রিটিশ জার্নাল অব সার্জারিতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তরুণদের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ক্যানসারের হার প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
৫০ বছরের নিচের পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর শীর্ষ কারণ এখন কোলোরেক্টাল ক্যানসার, আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয়। গবেষকরা এই প্রবণতাকে ‘বার্থ কোর্ট ইফেক্ট’ বলে বর্ণনা করছেন, যার মানে হলো—যাঁরা ১৯৯০-এর পরে জন্মেছেন, তারা আগের প্রজন্মের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, কারণ তারা বেশি মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার, স্থূলতা, বসে থাকার অভ্যাস এবং রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এসেছেন।
জাতিগত বৈষম্যও রয়েছে চোখে পড়ার মতো।
হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, তরুণ বয়সে পাকস্থলীর ক্যানসারের হার ২২ শতাংশ, যেখানে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি মাত্র ৭ শতাংশ। ব্ল্যাক, হিস্পানিক এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি রেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান কাঠামোগত বৈষম্যের প্রতিফলন বলে মনে করছেন গবেষকরা।
রেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী?
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, রেক্টাল ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত নিরব থাকে, যার ফলে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয়। তবে রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
-
মলত্যাগে পরিবর্তন (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ঘনঘন মলত্যাগের অনুভূতি)
-
মনে হতে পারে মলত্যাগ সম্পূর্ণ হয়নি
-
মলের রঙে পরিবর্তন (উজ্জ্বল লাল বা গাঢ় খয়েরি রক্ত)
-
পেট ব্যথা
-
সরু আকারের মল
-
অকারণে ওজন কমে যাওয়া
-
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
তরুণদের রেক্টাল ক্যানসারের প্রধান ঝুঁকি কারণসমূহ
🔴 অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা
মোটা ব্যক্তিদের রেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি, বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখলে ঝুঁকি কমে।
🔴 টাইপ-২ ডায়াবেটিস
এই ধরনের ডায়াবেটিস থাকা ব্যক্তিদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এমনকি ওজন ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও। ইনসুলিনের মাত্রা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
🔴 অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
প্রক্রিয়াজাত বা লাল মাংস যেমন বিফ, হট ডগ, সসেজ বেশি খেলে ঝুঁকি বাড়ে। ভিটামিন ডি, ফল, শাকসবজি ও পুরো দানাশস্য কম খাওয়াও একটি বড় কারণ।
🔴 ধূমপান
তামাক ব্যবহারে কেবল ফুসফুস নয়, বরং পলিপ ও রেক্টাল ক্যানসারের সম্ভাবনাও বাড়ে।
🔴 অ্যালকোহল সেবন
হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় মদ্যপান করলেও রেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। পুরুষদের দিনে ২ গ্লাস এবং নারীদের ১ গ্লাসের বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
🔴 বয়স ও প্রজন্মভিত্তিক ঝুঁকি
৫০ বছরের পর এই ক্যানসার বেশি দেখা গেলেও নতুন প্রজন্ম আগের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
🔴 জাতি ও বর্ণভিত্তিক পার্থক্য
ব্ল্যাক, হিস্পানিক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ক্যানসার বেশি দেখা যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য ও পরিবেশগত কারণের ফল।
🔴 পলিপ বা পূর্বে ক্যানসার ইতিহাস
যাঁদের আগে বড় বা একাধিক অ্যাডেনোমাটাস পলিপ ছিল বা যাঁরা আগে কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদের আবার এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
🔴 ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD)
আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোন’স ডিজিজের মতো দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ থাকলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
🔴 পারিবারিক ইতিহাস
যদি কারো নিকট আত্মীয় (পিতা-মাতা, ভাইবোন, সন্তান) ৫০ বছরের কম বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
🔴 বংশগত জেনেটিক সিনড্রোম
প্রায় ৫% কোলোরেক্টাল ক্যানসার বংশগত জেনেটিক মিউটেশনজনিত। লিঞ্চ সিনড্রোম বা ফ্যামিলিয়াল অ্যাডেনোমাটাস পলিপোসিস (FAP) এই ঝুঁকিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
তরুণদের মধ্যে রেক্টাল ক্যানসারের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, যা মূলত আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের প্রতিফলন। সচেতনতা, সময়মতো স্ক্রিনিং এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হতে পারে এই ঝুঁকি রোধের প্রথম পদক্ষেপ।
ইমরান