ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পের শুল্কের ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১০:২৩, ২ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্পের শুল্কের ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রায় সব যুক্তরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য অংশীদারের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর শুক্রবার বিশ্ববাজারে ব্যাপক ধাক্কা লাগে। ঘোষণাটি কার্যকর হওয়ার আগে সাতদিন সময় থাকলেও এই সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার রাতের দিকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ডজনখানেক দেশের পণ্যে ১০ থেকে ৪১ শতাংশ হারে নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে।

তবে হোয়াইট হাউজ জানায়, নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ৭ আগস্ট থেকে—যা পূর্বঘোষিত শুক্রবারের পরিবর্তে এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে। এতে অন্যান্য দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুবিধাজনক শর্তে চুক্তি করার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার প্রতিবেশী কানাডা ৩৫ শতাংশ হারে শুল্কের মুখে পড়েছে, যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে আগের মতোই ছাড় বহাল থাকবে।

এই শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের ‘অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের’ অংশ, যা তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় রপ্তানিকারকদের জন্য শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি করবে এবং বিদেশি পণ্য প্রতিরোধ করে দেশের শিল্পকারখানা পুনরুজ্জীবিত করবে।

তবে এই কঠোর পদক্ষেপে মার্কিন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা বেড়েছে।

শুক্রবার হংকং, লন্ডন ও নিউ ইয়র্কের শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন দেখা গেছে। একই সঙ্গে দুর্বল কর্মসংস্থানসংক্রান্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

এ সপ্তাহেই মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ রাজনৈতিক চাপে পড়েও সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় কমে যায় এবং বেকারত্বের হার ৪.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.২ শতাংশে দাঁড়ায়।

ওয়াল স্ট্রিটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১.৬ শতাংশ এবং নাসডাক ২.২ শতাংশ হারে কমে যায়।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও স্পষ্ট

ট্রাম্প প্রায় ৭০টি দেশের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছেন, যা প্রথমে ‘পারস্পরিক’ শুল্ক হিসেবে ১০ শতাংশ ছিল। নতুন নির্বাহী আদেশে এটি দেশভেদে ভিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া, অন্য দেশে ঘুরিয়ে আনা পণ্যে (transshipped goods) অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে।

তবে শুল্ক আরোপের পেছনে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্যও স্পষ্ট। ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ট্রাম্পের মিত্র বলসোনারোর বিচার বন্ধে চাপ দিতে ব্রাজিলকে আলাদা শুল্কে নিশানা করা হয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করায় কানাডার ওপরও নতুন শুল্ক চাপানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলসহ অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধে কানাডা ‘সহযোগিতা করেনি’, যদিও কানাডা এর বড় উৎস নয়।

মেক্সিকোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের সময় দিয়েছে ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির হুমকির আগে।

তবে কানাডা ও মেক্সিকোর অনেক পণ্য এখনো উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ছাড় পাচ্ছে।

কার্নি জানিয়েছেন, তার দেশ শুল্ক বৃদ্ধিতে ‘হতাশ’, তবে ব্যতিক্রমগুলোর কারণে এখনো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির গড় শুল্কহার তুলনামূলকভাবে কম।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম ভেঙে দিচ্ছে

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, “নিঃসন্দেহে, এই নির্বাহী আদেশ ও সাম্প্রতিক মাসগুলোর চুক্তিগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যব্যবস্থার গড়ে ওঠা নিয়ম-কানুনকে ছিঁড়ে ফেলছে।”

শুক্রবার ট্রাম্প আরও জানান, তিনি আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে “শুল্ক ডিভিডেন্ড” বিতরণের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

চীনের নাম এই তালিকায় ছিল না, কারণ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন এক সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে।

একসময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং একে অপরের ওপর শতকরা তিন অংকের হারে পাল্টাপাল্টি শুল্ক চাপালেও বর্তমানে তা কিছুটা কমিয়ে একটি যুদ্ধবিরতির দিকে এগোচ্ছে দুই দেশ।

ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন চুক্তির মাধ্যমে কঠোর শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে।

তবে সুইজারল্যান্ডের ওপর সর্বশেষ আদেশে শুল্ক বাড়িয়ে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
 

সজিব

×