ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক বিমান ‘সি-৫এম সুপার গ্যালাক্সি’ এখনো আকাশপথের রাজা

প্রকাশিত: ১৬:২২, ১ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৬:২২, ১ আগস্ট ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক বিমান ‘সি-৫এম সুপার গ্যালাক্সি’ এখনো আকাশপথের রাজা

ছবিঃ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে এখনো নির্ভরতার আর অপরাজেয় ক্ষমতার প্রতীক হয়ে আছে Lockheed C-5M Super Galaxy। বিশাল আকৃতির এই বিমানটি শুধু সামরিক সরঞ্জাম নয়, যুদ্ধক্ষেত্র, মানবিক বিপর্যয় বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যও নিয়মিত আকাশে পাড়ি জমায়। শীতল যুদ্ধের সময় তৈরির উদ্দেশ্য থাকলেও, আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় এটি আজও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর (USAF) কাঁধে অন্যতম ভরসা।

১৯৭০ সালে সি-৫ গ্যালাক্সির যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে নানা সমস্যা যেমন—ডানায় ফাটল, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি থাকলেও সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠে। ২০০০-এর দশকে এসে যখন নতুন যুগের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে, তখন Avionics Modernization Program (AMP) এবং Reliability Enhancement and Re-engining Program (RERP) এর মাধ্যমে সি-৫এ গ্যালাক্সির মধ্যে নতুন জীবন আসে। এই পরিবর্তনই জন্ম দেয় আজকের ‘সি-৫এম সুপার গ্যালাক্সি’কে।

এই বিমানটির প্রতিটি ইঞ্জিন ৫১,২৫০ পাউন্ড থ্রাস্ট দিতে সক্ষম। এর ফলে উড্ডয়ন সময় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে, উড়াল গতিও অনেক বেড়েছে। একবারেই এটি প্রায় ২৮১,০০০ পাউন্ড পণ্য পরিবহন করতে পারে—যা ছয়টি সাঁজোয়া যান বা পাঁচটি হেলিকপ্টার একসঙ্গে আকাশে তুলতে সক্ষম। এতে থাকা বিশেষ ‘kneeling system’ এর সাহায্যে বিমানের পেট নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে, ফলে মাটির সঙ্গে সমান হয়ে গিয়ে মালামাল তোলা বা নামানো সহজ হয়ে যায়।

সি-৫এম একটানা প্রায় ৪,৮০০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে পারে—যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছাতে যথেষ্ট। আবার যদি বিমানটি আকাশেই জ্বালানি নেয়, তাহলে তার পাল্লা আরও অনেক বেশি বাড়ে।

২০১২ সালে চালু হওয়া Mobility Mission Linking (MML) প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিমানগুলোর ফাঁকা অবস্থায় উড়াল কমিয়ে জ্বালানির অপচয় রোধ করা হয়। শুধু প্রথম বছরেই এই পদক্ষেপে ১৩ লাখ ডলার সাশ্রয় হয় এবং প্রায় ৩.৫ লাখ গ্যালন জ্বালানি বাঁচানো সম্ভব হয়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর হাতে থাকা ৫২টি C-5M প্রতিনিয়ত সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডোভার, ট্রাভিস, ল্যাকল্যান্ড ও ওয়েস্টোভার ঘাঁটি থেকে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত যোগাযোগ, এভিয়নিক্স ও রাডার প্রযুক্তি যুক্ত করে বিমানগুলোকে আধুনিক রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষ্য—এই বিমানের কার্যক্ষমতা অন্তত ২০৪০ সাল পর্যন্ত ধরে রাখা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক পরিবহন বিমান Antonov An-225 ইউক্রেন যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এখন আর কোনো বিমানই সি-৫এম-এর সঙ্গে তুলনীয় নয়। রাশিয়ার An-124 এখনকার সবচেয়ে বড় সক্রিয় সামরিক পরিবহন বিমান হলেও, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যবহারের উপযোগী নয়।

যখনই কোনো বিপর্যয়, যুদ্ধ বা দূরবর্তী এলাকায় দ্রুত ও বিশাল পণ্য পাঠানো দরকার হয়, তখনই C-5M সুপার গ্যালাক্সি তার বিশাল ডানায় ভর করে আকাশে উঠে পড়ে। এটি শুধু একটি বিমান নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শক্তি ও প্রস্তুতির এক চলমান প্রতীক। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আকাশে উড়লেও, এখনো তার শক্তি, পরিধি আর নির্ভরতার কোনো ঘাটতি নেই।

সি-৫এম যেন আকাশপথে এক চলমান পাহাড়—নীরবে কাজ করে যায়, কিন্তু তার প্রভাব গভীর, দৃঢ় এবং বৈশ্বিক।

 
 

মারিয়া

×