ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি

ইরান-পাকিস্তান বন্ধুত্ব ভবিষ্যতের কৌশলগত বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২ আগস্ট ২০২৫

ইরান-পাকিস্তান বন্ধুত্ব ভবিষ্যতের কৌশলগত বিনিয়োগ

ছবি: সংগৃহীত।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যকার বন্ধুত্ব শুধু অতীতের ঐতিহ্য নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। শনিবার (০২ আগস্ট) পাকিস্তানি পত্রিকা ‘দ্য নিউজ’-এ প্রকাশিত “A Shared Future” শীর্ষক এক প্রবন্ধে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আরাঘচি লিখেছেন, “আমাদের বন্ধুত্ব অতীতের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নয়; এটি ভবিষ্যতের কৌশলগত বিনিয়োগ। ঐক্য থেকে আমরা শক্তি পাই।”

তিনি আরও বলেন, ইরানের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম ভিত্তি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দৃঢ়, স্থিতিশীল ও পারস্পরিক উপকারভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। এই দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে রয়েছে পাকিস্তান-একটি দেশ যার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক শুধু ভৌগোলিক নয়, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা সভ্যতা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও কৌশলগত স্বার্থের গভীর মিলের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

আরাঘচি লেখেন, প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের আসন্ন পাকিস্তান সফর এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন গতি আনবে। এর আগে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ইসলামাবাদ সফর এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের তেহরান সফরের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত কেবল দুটি রাষ্ট্রকে বিভক্ত করেনি, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি মানুষ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও চিন্তাধারার এক প্রবাহপথ হিসেবে কাজ করেছে।”

দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংযোগের ওপর জোর দিয়ে আরাঘচি বলেন, “আমরা উভয়েই মুসলিম রাষ্ট্র, ইসলামের ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও সংহতির মূলনীতির ওপর আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অবস্থান গড়ে তুলেছি। এসব মূল্যবোধ আমাদের ফিলিস্তিনের সংগ্রামের মতো ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করে।”

অর্থনৈতিক দিক থেকে তিনি বলেন, পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদনক্ষমতা ও ইরানের শক্তিসম্পদ এই দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সংহতির একটি প্রাকৃতিক ভিত্তি তৈরি করে। যোগাযোগ, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে, যা গোটা অঞ্চলের জন্য মডেল হতে পারে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে আরাঘচি বলেন, সীমান্ত অঞ্চলে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে লড়াই এখন আর বিকল্প নয়, এটি একটি আবশ্যিকতা। এ ছাড়া, ইসরায়েলের গাজায় গণহত্যা, সিরিয়া ও লেবাননে দখলদারিত্ব এবং ইরানের ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আঞ্চলিক নিরাপত্তায় একতাবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তিনি পাকিস্তান সরকারের সেই স্পষ্ট অবস্থানের প্রশংসা করেন, যা তারা ২০২৫ সালের জুন মাসে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিয়েছিল। একই সঙ্গে তিনি পাকিস্তানি জনগণের সংবেদনশীল সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন, যা ইরানি সমাজে গভীর প্রতিধ্বনি তুলেছিল।

আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC), সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO), অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (ECO) এবং ডি-৮ ফোরামের মধ্যেও উভয় দেশ নিরবচ্ছিন্নভাবে একযোগে কাজ করছে।

আরাঘচি বলেন, “আফগানিস্তান আমাদের উভয়ের প্রতিবেশী দেশ। তাই সেখানে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করাও আমাদের অভিন্ন স্বার্থের অন্তর্গত।” তিনি বাণিজ্য ও ট্রানজিট করিডর গড়ে তুলতে যৌথ প্রচেষ্টার কথা বলেন, যা পুরো অঞ্চলকে সহযোগিতাভিত্তিক এক নতুন স্থাপত্য উপহার দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপতি পেজেশকিয়ানের সফর কেবল অতীত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার সুযোগ নয়, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নতুনভাবে কল্পনা করার সুযোগ। কবি আল্লামা ইকবালের কথাকে স্মরণ করে বলা যায়, ‘জাতিগুলোর আত্মা জন্ম নেয় কবিদের হৃদয়ে, আর ধ্বংস হয় রাজনীতিকদের হাতে।’”

প্রবন্ধের উপসংহারে আরাঘচি লেখেন, “আমাদের বন্ধুত্ব কেবল অতীতের স্মৃতি নয়; এটি ভবিষ্যতের কৌশলগত বিনিয়োগ। ঐক্যে আমরা শক্তি খুঁজে পাই। সহযোগিতায় খুঁজে পাই উদ্দেশ্য। আর পারস্পরিক সম্মানে খুঁজে পাই টেকসই শান্তি ও অগ্রগতির ভিত্তি।”

সূত্র: ইরনা।

মিরাজ খান

×