ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

নীরব ঘাতক ফুসফুসের ক্যানসার: জানুন প্রাথমিক ৭টি সতর্কতা সংকেত

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ২ আগস্ট ২০২৫

নীরব ঘাতক ফুসফুসের ক্যানসার: জানুন প্রাথমিক ৭টি সতর্কতা সংকেত

ফুসফুসের ক্যানসারকে প্রায়ই ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কারণ এটি ধীরে ধীরে শরীরে গড়ে ওঠে এবং অনেক সময় পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। অধিকাংশ সময় রোগটি তখনই শনাক্ত হয়, যখন তা শরীরে মারাত্মক আকার ধারণ করে। অন্য অনেক ক্যানসারের মতো স্পষ্ট ফোলাভাব বা বাহ্যিক পরিবর্তন না থাকায়, ফুসফুসের ক্যানসারের উপসর্গগুলো সাধারণ সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগের মতোই মনে হতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়ে।

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্যানসার-এ প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ভারতে প্রতি দুইজন ফুসফুসের ক্যানসার রোগীর মধ্যে একজন ধূমপায়ী নন। আগে যেখানে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই তামাককে দায়ী করা হতো, এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো—ভারতে মাত্র ৩.৫% থেকে ৭.২% ফুসফুসের ক্যানসার রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হন। এর ফলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ফুসফুসের ক্যানসারের এমন সাতটি প্রাথমিক সতর্কতামূলক লক্ষণ, যেগুলো অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়:

১. দীর্ঘস্থায়ী কাশি

যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থেকে যায় এবং তা সাধারণ ঠান্ডা-সর্দির মতো না হয়, তাহলে সেটা গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। খুশখুশে বা কফসহ কাশি যদি দিনে দিনে বেড়ে যায়, তাহলে সেটা ফুসফুসের ক্যানসারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।

২. কাশির সঙ্গে রক্ত আসা

কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে সেটি অবহেলা করা বিপজ্জনক। এটি ফুসফুসে থাকা টিউমারের কারণে এয়ারওয়েতে রক্তপাতের ইঙ্গিত হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে হেমোপটিসিস বলা হয় এবং এটি প্রায় ২০–৩০% ফুসফুসের ক্যানসার রোগীর মধ্যে দেখা যায়।

৩. শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাসে কষ্ট হওয়া

হঠাৎ করেই হাঁটাচলা বা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হলে, তা হতে পারে টিউমার দ্বারা বাতাস চলাচলের পথ আটকে যাওয়ার কারণে। কখনো কখনো ফুসফুসের চারপাশে তরল জমে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. বুকে ব্যথা

শ্বাস নেয়া, কাশলে বা হাসলে বুকে ব্যথা অনুভব করা স্বাভাবিক নয়। কোনো অজানা কারণে কাঁধ, পিঠ বা বুকের আশেপাশে ব্যথা থেকে গেলে সেটি ফুসফুসের টিউমারের চাপ বা স্নায়ুতে প্রভাবের ফল হতে পারে।

৫. কণ্ঠস্বর পরিবর্তন বা কর্কশতা

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গলার স্বর ভেঙে যাওয়া বা কণ্ঠ কর্কশ হয়ে যাওয়া ফুসফুসের ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। এটি ভোকাল কর্ড নিয়ন্ত্রণকারী নার্ভে টিউমারের প্রভাবের কারণে হয়ে থাকে।

৬. ওজন হ্রাস ও অতিরিক্ত ক্লান্তি

হঠাৎ করেই ওজন কমে যাওয়া এবং সবসময় দুর্বল অনুভব করা শরীরের ভেতরে থাকা ক্যানসার কোষগুলোর কারণে হতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসার শরীরের বিপাক ও প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।

৭. ঘন ঘন বুকে সংক্রমণ হওয়া

একই ফুসফুসে বারবার নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস হলে, সেটি কোনো টিউমার বা বাধার কারণে এয়ারওয়ে আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। যদি অ্যান্টিবায়োটিকেও আরাম না মেলে, তাহলে অবশ্যই ফুসফুসের ক্যানসার পরীক্ষা করা উচিত।

ফুসফুসের ক্যানসারকে চিহ্নিত করা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ততই চিকিৎসা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ধূমপান না করলেও আপনি ঝুঁকির বাইরে নন। উপরের উপসর্গগুলোর একাধিক যদি আপনার মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
 

সজিব

×