
আমরা আমাদের কিডনি নিয়ে ভাবি না, যতক্ষণ না বড় কোনো সমস্যা দেখা দেয়। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দুটি আমাদের শরীরে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে—রক্ত পরিশোধন, শরীরের তরল ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা এবং বর্জ্য অপসারণের মতো গুরুতর কাজ করে।
কিন্তু জানেন কি, রক্ত পরীক্ষা ছাড়াও আপনি বাড়িতেই কিডনির কার্যকারিতা পরখ করে দেখতে পারেন?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত ইউরিন আউটপুট বা প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করলেই কিডনির স্বাস্থ্যের একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এটি একদম সহজ, খরচ নেই, এবং কিডনি সমস্যার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য হতে পারে জীবনরক্ষাকারী একটি অভ্যাস।
কেন প্রস্রাবের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ?
আপনার কিডনি প্রতিনিয়ত রক্ত ছেঁকে অতিরিক্ত পানি, বর্জ্য পদার্থ এবং টক্সিন বের করে দেয়, যা ইউরিন বা প্রস্রাব হিসেবে শরীর থেকে বের হয়। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে, বিশেষত আইসিইউ বা সংকটাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে, ইউরিন আউটপুট একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের ইউরিন আউটপুট হওয়া উচিত প্রতি ঘণ্টায় প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৫ থেকে ১ মিলিলিটার। অর্থাৎ, কেউ যদি ৬০ কেজি ওজনের হন, তাহলে তাঁর প্রতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৬০ মিলিলিটার ইউরিন হওয়া স্বাভাবিক ধরা হয়। ১০ ঘণ্টায় মোট ইউরিন হওয়া উচিত ৩০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার।
কীভাবে বাড়িতে ইউরিন আউটপুট পরিমাপ করবেন?
যা লাগবে: একটি পরিষ্কার, পরিমাপযোগ্য বোতল বা কনটেইনার—১ লিটারের পানি বোতলই যথেষ্ট।
যেভাবে করবেন:
১. দিনের এমন ১০ ঘণ্টা বেছে নিন, যখন আপনি ইউরিন পরিমাপ করতে পারবেন।
২. প্রতিবার ইউরিন করার সময় সেটি সংগ্রহ করুন ও পরিমাণ মাপুন।
৩. সব ইউরিনের পরিমাণ যোগ করে দিন শেষে হিসাব করুন।
৪. আপনার ওজন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণের সঙ্গে তুলনা করুন।
যদি আপনি ৬০ কেজি ওজনের হন, তাহলে দিনে ১০ ঘণ্টায় ৬০০ মিলিলিটার ইউরিন হলে ধরে নেওয়া যায় কিডনি ভালো কাজ করছে।
বিশেষ পরামর্শ: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনকারী হলে মাসে এক-দুইবার এটি পরখ করে দেখতে পারেন।
কম ইউরিন হলে কী বোঝাবে?
প্রস্রাবের পরিমাণ যদি নিয়মিত কম থাকে, তা হতে পারে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এর পেছনে থাকতে পারে—
* পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন
* কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া
* একিউট কিডনি ইনজুরি (AKI) বা হঠাৎ কিডনি ক্ষতি
জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন বলছে, ইউরিন আউটপুট কমে যাওয়া কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
কোন কোন উপসর্গের দিকে খেয়াল রাখবেন:
* পা, মুখ বা চোখ ফোলাভাব
* অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
* ফেনা বা গা dark ইউরিন
* বমি ভাব বা মনোযোগে ঘাটতি
ইউরিন পর্যবেক্ষণ: সহায়ক হলেও চূড়ান্ত নয়
প্রস্রাবের পরিমাণ দেখেই পুরো কিডনি পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। এটি একটি পূর্বাভাসমূলক ও সহজ পরীক্ষা হলেও, প্রকৃত কিডনি মূল্যায়নের জন্য সিরাম ক্রিয়েটিনিন, eGFR, বা অন্য ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে। তাই যদি আপনি অস্বাভাবিক ইউরিন লক্ষ করেন বা উপরে বলা উপসর্গগুলোর সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
সজিব