
ছবি: সংগৃহীত
নির্মম আচরণ বা অসদাচরণের কারণে অনেক সময় বাচ্চারা মা-বাবার সাথে অবজ্ঞাসূচক কথা বলে, যা পিতা-মাতাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। সন্তানদের মতামত প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বারবার কথা বাগাড়ানোর প্রবণতা ভালো লক্ষণ নয় এবং ভবিষ্যতে আরও সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই, এমন পরিস্থিতিতে মা-বাবারা শান্ত মনের সঙ্গে কিভাবে এই ধরনের বাচ্চাদের সামলাবেন, জেনে নেওয়া যাক পাঁচটি উপায়:
১. শান্ত থাকুন
যখন সন্তান অবজ্ঞাসূচক কথা বলে, তখন অনেক মা-বাবাই রেগে গিয়ে কঠোর শাস্তি দিতে চান, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে। রাগজড়িত প্রতিক্রিয়া শিশুর মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি করে। তাই, এমন সময় নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, গভীর নিশ্বাস নিন, কণ্ঠস্বর শান্ত রাখুন। এতে সন্তান বুঝবে যে অবজ্ঞাসূচক কথা বললে কোনো খারাপ প্রতিক্রিয়া পাবে না, তবে তা মানা হবে অবশ্যই। রেগে ওঠার আগেই ১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে শ্বাস নিন বা সাময়িক দূরে সরে আসুন। আপনার শান্ত প্রতিক্রিয়া শিশুর জন্য শিক্ষণীয়, যা তাকে নিজেও শান্ত থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
২. স্পষ্ট নিয়ম তৈরি করুন
শিশুর জন্য স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট সীমা থাকা জরুরি, যাতে সে বুঝতে পারে কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য এবং কোনটি নয়। পরিবারের নিয়মগুলো শিশুর কাছে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিন —
* সবাইকে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে হবে।
* না বলতে হলে চিৎকার বা খারাপ ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
* নিয়মগুলো পরিবারে সবাই শান্ত থাকা অবস্থায় আলোচনা করা উচিত, তুমুল ঝগড়ার সময় নয়। নিয়ম না মানলে সময় দেওয়ার জন্য বিরতি বা বিশেষ সুবিধা বন্ধের মতো শাস্তি থাকতে পারে। স্পষ্ট নিয়ম থাকলে শিশু শিখবে কিভাবে সম্মানজনকভাবে কথা বলতে হয়।
৩. মনোযোগ দিয়ে শুনুন
অনেক সময় বাচ্চারা অবজ্ঞাসূচক কথা বলে কারণ তারা বিরক্ত বোধ করে এবং নিজের মতামত প্রকাশের জন্য লড়াই করে। তাই তার কথার মধ্যে লুকানো আসল অনুভূতিটি বোঝার চেষ্টা করুন। হয়তো সে ক্লান্ত, বিভ্রান্ত বা হতাশায় আছে। যখন সে বাগাড়ামি করবে, তখন নম্রভাবে বলতে পারেন — “তোমার অনুভূতিগুলো একটু নেতিবাচক মনে হচ্ছে, আমাকে বলো কেন তুমি এমন ভাবছো?” “আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু দয়া করে ভদ্র ভাষায় বলবে।” এভাবে শিশু বুঝবে তার অনুভূতির মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তাই সে রূঢ় আচরণের প্রয়োজন অনুভব করবে না।
৪. ইতিবাচক প্রশংসা দিন
শিশুর ভালো আচরণ পেলে তার প্রশংসা করুন এবং তাকে উৎসাহ দিন। “তুমি আজ খুব ভদ্র ছিলে, ধন্যবাদ” বা “তোমার শান্ত মনোভাব আমি খুব পছন্দ করলাম” এরকম বাক্য বলুন। স্টিকার চার্ট বা মাঝে মাঝে বেশি খেলা করার সুযোগ দিয়ে সন্তানকে পুরস্কৃত করুন, তবে এই পুরস্কার অবশ্যই অহেতুক বা মাত্রাতিরিক্ত হওয়া উচিত নয়। ইতিবাচক প্রশংসা শিশুকে ভালো আচরণ বজায় রাখতে অনুপ্রেরণা দেয়।
৫. ধৈর্য্য ধরুন ও নিয়ম মেনে চলুন
ব্যবহার পরিবর্তন করতে ধৈর্য্য ও নিয়মিত প্রয়াস প্রয়োজন। যদি অবজ্ঞাসূচক কথা বলার জন্য অনিয়মিত শাস্তি হয়, শিশুরা আরও বেশি নিয়ম ভাঙ্গতে পারে। তাই আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করে তা ধৈর্য্যসহকারে নিয়মিত প্রয়োগ করুন। ছোট ছোট উন্নতি হলে প্রশংসা করুন, ভুল হলে শান্তভাবে স্মরণ করিয়ে দিন। যদি এসব কাজ না করে, তাহলে পেশাদার থেরাপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
পরিবারে শিশুদের সাথে শান্ত, সহনশীল ও সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব এই পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করলে। এতে করে ভবিষ্যতে সন্তানরা আরও ভালো আচরণ শেখার সুযোগ পাবে এবং পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে।
আসিফ