
নাটোরের কাঁচাগোল্লা-বাংলাদেশের মিষ্টান্ন ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
ইতিহাস, ঐতিহ্যে ভরপুর উত্তরের জেলা নাটোর নানা কারণে বিখ্যাত। রানী ভবানী, উত্তরা গণভবন, জীবনানন্দের বনলতা সেনের পাশাপাশি বিখ্যাত মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লার জন্য নাটোর জেলা সমান বিখ্যাত। নাটোরের কাঁচাগোল্লা মিষ্টি বাংলাদেশের মিষ্টান্ন শিল্পে একটি স্বতন্ত্র স্থান দখল করে আছে। এর স্বাদ, গন্ধ, নরম ও দানাদার এমনই যে একবার খেলে সহজে ভুলতে পারবেন না। সাধারণত মিষ্টি মানেই রসগোল্লা, সন্দেশ কিংবা চমচমের কথা মনে পড়ে। তবে নাটোরের কাঁচাগোল্লার স্বাদ ও ঐতিহ্য আলাদা। এর পেছনে আছে দীর্ঘ ইতিহাস, শ্রম, ভালোবাসা এবং মেধার মিশেল। আজ সেই গল্প তুলে ধরা হচ্ছে।
নাটোরের কাঁচাগোল্লা-বাংলাদেশের মিষ্টান্ন ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ‘নাটোরের কাচাগোল্লা’। এ শুধু একটি মিষ্টি নয় বরং এটি একটি ইতিহাস, একটি সংস্কৃতি এবং নাটোরবাসীর গর্ব। এই বিশেষ মিষ্টান্নটির স্বাদ, গঠন, নামকরণ এবং উৎপত্তি কাহিনী যে কাউকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্র খাবার রয়েছে কিন্তু নাটোরের কাঁচাগোল্লা তার স্বাতন্ত্রকে দিয়ে সারা দেশেই এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।
কাঁচাগোল্লা তৈরির ইতিহাস
১৭৬০ সালের দিকে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীলা শাসনকর্তা রানী ভবানীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লা তৈরি হয়। কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে চমৎকার কাহিনী। জনশ্রুতি রয়েছে, নিতান্ত দায়ে পড়েই নাকি তৈরি হয়েছিল এই বিখ্যাত মিষ্টান্ন। নাটোর শহরের লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। দোকানে বেশ কয়েকটি বড় বড় চুলা ছিল। মধুসূদন এসব চুলায় দেড় থেকে দুই মণ ছানা দিয়ে পানতোয়া, চমচম, কালো জাম প্রভৃতি মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে কাজ করতেন দশ পনেরজন কর্মচারী। হঠাৎ একদিন মিষ্টির দোকানের কারিগর আসেনি। মধুসূদনের তো মাথায় হাত! এত ছানা এখন কী হবে? এই চিন্তায় তিনি অস্থির। নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছানাতে তিনি চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখতে বলেন। এরপর মুখে দিয়েই দেখা যায়, ওই চিনি মেশানো ছানার দারুণ স্বাদ হয়েছে। নতুন মিষ্টির নাম কী রাখা হবে এ নিয়ে শুরু হয় চিন্তা-ভাবনা। যেহেতু চিনির রসে ডোবানোর পূর্বে ছানাকে কিছুই করতে হয়নি অর্থাৎ কাঁচা ছানাই চিনির রসে ঢালা হয়েছে কিন্তু রসগোল্লার ছানাকে তেলে ভেজে চিনির রসে ডোবানো হয়। তাই তার নামকরণ করা হয় রসগোল্লা। এটা কাঁচা ছানার রসে ডোবানো হয়েছে বলেই এর নাম দেওয়া হয় হলো কাঁচাগোল্লা। কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, পানিতোয়া, এমনকি অবাক সন্দেশকেও হার মানিয়ে দেয়। এর রয়েছে একটি মিষ্টি কাঁচা ছানার গন্ধ যা অন্য কোনো মিষ্টিতে পাওয়া যায় না। ধীরে ধীরে মিষ্টি রসিকরা এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। তখন থেকে মধুসূদন নিয়মিতই এই মিষ্টি তৈরি করতেন। ধীরে ধীরে কাঁচাগোল্লা সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁচাগোল্লার চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মন ছানার কাঁচাগোল্লা তৈরি হতে লাগল। সে সময় ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচাগোল্লা কথা।
যেভাবে কাঁচাগোল্লা তৈরি হয়
নাটোরের কাঁচাগোল্লা বাংলাদেশের মিষ্টির ইতিহাসে এক অনন্য স্বাদযাত্রা। নামে কাঁচাগোল্লা হলেও এটি কিন্তু গোল্লা জাতীয় কিছু নয়। ছানা থেকে তৈরি শুকনো মিষ্টি। কাঁচাগোল্লা মূলত দুধ এবং চিনির মিশ্রণে তৈরি হয়। খাঁটি দুুধের ছানা ও চিনি কাঁচাগোল্লা তৈরির প্রধান উপাদান। এক কেজি কাঁগোল্লা তৈরি করতে প্রায় ১ কেজি কাঁচা ছানা ও ৪০০ গ্রাম চিনির প্রয়োজন হয়। কড়াইতে চিনিগুলো পানিসহ জ্বাল দিতে হয়। চিনি পরিষ্কার করতে সামান্য কাঁচা দুধ দিতে হয়। কড়াইয়ের গাদ বা ময়লা পরিষ্কার হয়ে গেলে কড়াইয়ে ছানা ঢেলে দিতে হয়। এরপর জ্বাল এবং একই সঙ্গে কাঠের খড়া দিয়ে নাড়তে হয়। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধারাবাহিকভাবে নাড়তে নাড়তেই পরিপূর্ণ কাঁচাগোল্লা তৈরি হয়ে যাবে। তবে এই নাড়াচাড়ার মধ্যে রয়েছে শৈল্পিক কৌশল। তবে নাটোরের কাঁচাগোল্লার বিশেষত্ব হলো এটি সিদ্ধ করা হয় না, বরং অল্প আঁচে চিনির মিশ্রণে কাঁচা অবস্থায় রাখা হয়, যা একে অন্য যেকোনো মিষ্টি থেকে আলাদা করে।
দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লা
১৭৬০ সালে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীলা শাসনকর্তা রাণী ভবানীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেই সময় নাটোরে মিষ্টির দোকান ছিল খুবই কম। এসব দোকানে বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা ছাড়াও অবাক সন্দেশ, রাঘবশাহী, চমচম, রাজভোগ, রসমালাই, পানিতোয়া প্রভৃতি মিষ্টি ছিল অন্যতম। তবে এর মধ্যে সবার শীর্ষে উঠে আসে কাঁচাগোল্লা। ফলে সে সময় জমিদারদের মিষ্টিমুখ করতে ব্যবহৃত হতো এই বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। এমনকি বিলেতের রাজ পরিবার পর্যন্ত যেত এই কাঁচাগোল্লা। আরও যেত ভারতবর্ষের সর্বত্র। রাজশাহী গেজেট পত্রিকাতেও কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতির কথা বলা হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে সেই সময় কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কলকাতা এবং নাটোর শহর একই সময় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ও এই দুই শহরের সার্বক্ষণিক ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা ভারত, ইংল্যান্ডসহ তৎকালীন বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।
কাঁচাগোল্লার মূল্য
বর্তমানে কাঁচাগোল্লা চার’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় কাঁচাগোল্লার বিক্রি বরাবরই বেশি। রাজ-রাজাদের আমল থেকেই কাঁচাগোল্লা সবার কাছে অত্যন্তপ্রিয়। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচাগোল্লা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। কাঁচাগোল্লা কিনতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাসস্ট্যান্ডে বা ভ্রাম্যমাণ ক্রেতাদের নিকট থেকে ভেজাল কাঁচাগোল্লা কিনলে ঠকতে হবে। নাটোরে কাঁচাগোল্লার বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ দোকান রয়েছে। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে লালবাজারের জয়কালীবাড়ি দোকান, শহরের মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডার ও জলযোগ মিষ্টান্ন ভা-ার।
স্বাদের বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতা
নাটোরের কাঁচাগোল্লা অন্য যেকোনো গোল্লা মিষ্টির তুলনায় আলাদা। সাধারণ রসগোল্লা রসে ভিজানো থাকে, সন্দেশ হয় শুষ্ক। কিন্তু কাঁচাগোল্লা হয় নরম এবং অল্প মিষ্টি রসযুক্ত। খেলে মুখে মোলায়েম ভাব আসে, সহজে গলে যায়। চিনির পরিমাণ কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীরাও সামান্য পরিমাণে খেতে পারছেন।
চাহিদা, সমস্যা এবং সম্ভাবনা
নাটোর শহরের লালবাজার জয়কালীমন্দির এলাকাসহ জয়কালী মিষ্টান্ত ভান্ডারসহ শহরের ভেতর কাঁচাগোল্লার বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। যাদের অন্যতম আয়ের উৎস এই কাঁচাগোল্লা। স্থানীয়ভাবে দুধ উৎপাদনের সঙ্গে নাটোরের কাঁচাগোল্লার সম্পর্ক নিবিড়। প্রতিদিন নাটোর শহরে ও আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার কেজি কাঁচাগোল্লা বিক্রি হয়।
নাটোর চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় ৫ হাজারের বেশি পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাঁচাগোল্লা মিষ্টান্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রতিদিন নাটোর থেকে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাঁচাগোল্লা সরবরাহ হয়।
কাঁচাগোল্লা মিষ্টান্নের কারিগর বাবু জানান, গত ৩০ বছর ধরে কাঁচাগোল্লা তৈরি করে আসছি। প্রতিদিন ভোরে দুধ সংগ্রহ করতে হয়। তারপর ছানা তৈরি করি, মিষ্টি বানাই। আমাদের জীবন এই মিষ্টিকে ঘিরেই। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, সংসার চালানো সবই এই কাঁচাগোল্লার ওপর নির্ভর করেই। মিষ্টি তৈরির সঙ্গে জড়িত অনেক নারী ও যুবক ঘরে বসে ছানা ছাঁকা, সিরা তৈরি, প্যাকেট তৈরির কাজ করে।
নাটোরের কাঁচাগোল্লার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে দুধের দাম বৃদ্ধি, চিনির দাম বৃদ্ধি এবং মানহীন দুধের কারণে মিষ্টির মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বাজারে ভেজাল পণ্য বিক্রি করছে, যা কাঁচাগোল্লার সুনাম ক্ষুণœ করছে। তবে সঠিক পদক্ষেপ, মান নিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে বাংলাদেশের গর্ব হিসেবে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা সম্ভব। নাটোরের অনেক উদ্যোক্তা অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে কাঁচাগোল্লা সরবরাহ করছেন। এভাবে নাটোরের কাঁচাগোল্লা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
ফেরিওয়ালা থেকে সাবধান
যারা নাটোর শহরের উপর দিয়ে (ট্রেন বা বাস) যাতায়াত করেছেন তারা এই স্টপেজে শুনেছেন, নোটোরের কাঁচাগোল্লা’ ডাক ফেরিওয়ালার কাছে। তবে এর সঙ্গে আসল কাঁচাগোল্লার বিন্দুমাত্র কোনো মিল নেই। অথচ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হচ্ছে এই ফেরিওয়ালাদের কাছে। ফলে অনেকে আসল কাঁচাগোল্লাকে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। আসল কাঁচাগোল্লার স্বাদ না ভুলার মতোই সুস্বাদু যা মনোলভা খাবারও বটে। প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে ফেরিওয়ালাদের নিকট থেকে কাঁচাগোল্লা ক্রয় করা উচিত নয়। কেননা তারা আসল কাঁচাগোল্লা বিক্রয় করেন না। নাটোর শহরের কিছু প্রসিদ্ধ দোকানে আসল কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়।
ভেজাল ও আসল কাঁচাগোল্লা চেনার উপায়
বর্তমানে বাজারে অনেক ভেজাল কাঁচাগোল্লাও পাওয়া যায়, আসল কাঁচাগোল্লা চেনার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। এগুলো হলো, ছানার গন্ধ ও স্বাদ খাঁটি হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি লাগবে না। কাঁচাগোল্লা নরম, ভাঙ্গা এবং মুখে দিলে গলে যাবে। অতিরিক্ত রং বা ঘনত্ব থাকবে না।
সংরক্ষণ ও পরিবহন
কাঁচাগোল্লা অন্য মিষ্টির তুলনায় তুলতুলে ও সংবেদনশীল হওয়ায় দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় না। তবে আধুনিক ফ্রিজিং প্রযুক্তি ও ফুড প্যাকেজিং ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এখন এটি ৩৫ দিন পর্যন্ত ভালো রাখা সম্ভব হচ্ছে।
নাটোরের স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্রীড়া সংগঠক আবদুর রাজ্জাক লাকি জানান, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে নাটোর শহরে গেলে কাঁচাগোল্লা না খেয়ে ফিরতাম না। কাঁচাগোল্লা না খেলে নাটোর যাওয়াই বৃথা মনে হতো। এখনো ঢাকায় আত্মীয়দের বাসায় গেলে নাটোর থেকে কাঁচাগোল্লা নিয়ে যাই।
নাটোর শহরের লালবাজার এলাকার জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকার ও ব্যবসায়ী প্রভাত পাল জানান, কাঁচাগোল্লা বানানোর সময় দুধের মান বজাই রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খাঁটি গরুর দুধ না হলে সেই নরম ভাব আসবে না। এছাড়া চিনির পরিমাণ, হাতে মাখানোর সময় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে হয়।
প্রভাত পাল আরও জানান, করোনা ও ৫ আগস্টের পর নাটোরে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে নাটোরে কাঁচাগোল্লার উৎপাদন ও বিক্রি কমে গেছে। নাটোরে স্থায়ী দোকানগুলোতে কারিগররা ভালো মানের কাঁচাগোল্লা তৈরি করে থাকেন। কিন্তু ফেরিওয়ালা এবং অস্থায়ী দোকানে ভালো মানের কাঁচাগোল্লা তৈরি হয় না। ফলে অস্থায়ী দোকান ও ফেরিওয়ালাদের নিকট থেকে কাঁচাগোল্লা ক্রয় করলে ক্রেতারা প্রতারিত হতে পারেন। অনেকে কাঁচাগোল্লা সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা পোষণ করেন। আসল এবং ভালো মানের কাঁচাগোল্লা কিনতে হলে ক্রেতাদের অবশ্যই প্রকৃত দোকান থেকে ক্রয় করতে হবে। বর্তমানে নাটোরে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার কেজি কাঁচাগোল্লা বিক্রি হয়।
হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নাটোর শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলামের ছেলে ও ব্যবসায়ী অরিন জানান, বর্তমানে জেলায় শতাধিক কারিগর রয়েছেন। এরসঙ্গে পায় ৫ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন জানান, নাটোরের কাঁচাগোল্লার সুনাম যাতে ক্ষুণœ না হয় এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়। এর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী, কারিগরদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সামনে আবার তাদের সঙ্গে বসার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া নাটোর বলতে অনেকেই কাঁচাগোল্লাকেই বোঝেন। কাঁচাগোল্লার জন্য নাটোর বিখ্যাত। এর স্বাদ ইউনিক। এখানে সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিশিয়ালস আসেন যাদেরকে কাঁচাগোল্লা মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। এছাড়া তারা সঙ্গে করে নাটোরের কাঁচাগোল্লা নিয়েও যান।
সবশেষে বলতে হয়, নাটোরের কাঁচাগোল্লা শুধু মিষ্টি নয় এটি একটি গৌরবময় উপাদান যা নাটোরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এর ইতিহাস, স্বাদ ও ঐতিহ্যে এখনো জীবন্ত আছে নাটোরের প্রতিটি কোণে।
এই মিষ্টির স্বাদে লুকিয়ে আছে স্থানীয় মানুষের শ্রম, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আবেগ। ভবিষ্যতে এই মিষ্টির স্বাদ যেন বিশ্বমঞ্চেও তুলে ধরা যায়, যুগ যুগ ধরে যেন এভাবেই টিকে থাক কাঁচাগোল্লার মান ও গৌরব এটাই সকলের প্রত্যাশা।
কালিদাস রায়, নাটোর
জিআই পণ্যের স্বীকৃতি অর্জন
আড়াইশ’ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্যে মাখা নাটোরের কাঁচাগোল্লা ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট দেশের ১৭টি নং জিআই পণ্যের স্বীকৃতি লাভ করে নাটোরের কাঁচাগোল্লা। কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখ-ের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এসব বিবেচনায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, নাটোরের পানি, দুধ এবং তৈরির বিশেষ প্রক্রিয়া ছাড়া নাটোরের কাঁচাগোল্লার আদি বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা সম্ভব নয়। সর্বশেষ ৮ আগস্ট নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি লাভে নাটোরের সাবেক জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার প্রচেষ্টায় মূলত কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি লাভ করে।
প্যানেল