ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

ত্রাণ পেয়ে ধন্যবাদ দিতেই শিশু আমিরকে গুলি!

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ৩ আগস্ট ২০২৫

ত্রাণ পেয়ে ধন্যবাদ দিতেই শিশু আমিরকে গুলি!

ছবি: সংগৃহীত

গেল ২৮ মে, দক্ষিণ গাজার তীব্র রোদে মাত্র একটু ত্রাণের আশায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে আসে হাড্ডিশার একটি শিশু – আমির। তার গায়ে ছিল ছেঁড়া জামা, পায়ে কিছুই ছিল না। লক্ষ্য ছিল সামান্য চাল আর ডাল সংগ্রহ। সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা অন্থনি আগুইলার জানান, শিশুটি তার মুখে হাত রেখে চুমু খায় এবং ইংরেজিতে বলে, "Thank you"। এরপর সে খাবার হাতে ফিরে যায় তার দলের দিকে।

 

 

কিন্তু সেই মুহূর্তেই সব বদলে যায়। ঠিক এরপরই শুরু হয় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণ। ছোড়া হয় মরিচের গুঁড়া, কাদানে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড—সবই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর। শিশু আমির প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেয়, কিন্তু গুলির শব্দে থেমে যায় তার ছোট্ট প্রাণের আকুতি। গাজার প্রতিটি ধূলিকণায় লুকিয়ে থাকা মৃত্যু যেন তার সাথেই দেখা করে।

 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ—সব ধরনের জিনিসের প্রবাহ থমকে গেছে। ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেন, "গাজা এখন মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত।"

 

মিডল ইস্ট মনিটর এবং সাংবাদিক টাকার কালসন-এর সাক্ষাৎকারে, আগুইলার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমিরকে দেখে তার নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ে। তিনি বলেন, “গাজার মানুষ পশু নয়, তারা মানুষ। কিন্তু তাদের এমনভাবে খুন করা হচ্ছে যেন তারা মূল্যহীন। এমনকি আত্মসমর্পণ করা আইএস যোদ্ধারাও গাজার শিশুদের চেয়ে বেশি সম্মান পায়।” জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা Gaza Humanitarian Foundation (GHF) গাজায় কাজ শুরু করার পর থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে ১০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে আগুইলার GHF থেকে পদত্যাগ করেন।

 

জাতিসংঘ সমর্থিত Integrated Food Security Phase Classification (IPC) জানায়, গাজায় প্রতি তিন শিশুর মধ্যে একজন চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক না খেয়ে মারা গেছেন।

 

গাজার মানুষ এই ত্রাণ সংগ্রহের বিপজ্জনক পরিস্থিতিকে "স্কুইড গেম"-এর সাথে তুলনা করেছেন। যেখানে ত্রাণ পাওয়া মানে জীবনের সম্ভাবনা আবার মৃত্যুর ঝুঁকিও। সাহায্য আসা মানেই আতঙ্ক, আর অপেক্ষা মানেই হয় মৃত্যু নয়তো পরের দিন মরার আশঙ্কা।


 

ছামিয়া

×