
ছবি: সংগৃহীত
আজকের ব্যস্ত জীবনে পর্যাপ্ত ঘুম যেন এক বিলাসীতা। অনেকেই কাজ, পড়াশোনা বা সামাজিক জীবনের চাপে প্রতিদিনের ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেন। কিন্তু এই অভ্যাসটি যে আপনার শরীরের ওপর কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে, তা হয়তো আপনি জানেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এটি শুধু আপনাকে ক্লান্ত বা বিরক্ত করে না, বরং নীরবে ডেকে আনে অসংখ্য জটিল রোগ।
নিয়মিত ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে যে ভয়ংকর রোগগুলো আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১. হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ
ঘুমের সময় আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী বিশ্রাম পায়। কিন্তু যখন আপনি কম ঘুমান, তখন শরীরের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের ওপর ক্রমাগত চাপ পড়তে থাকে। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুম হলে রক্তনালীতে চর্বি জমার (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) ঝুঁকি বাড়ে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস
কম ঘুম আপনার শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনকে ব্যাহত করে। ঘুমের অভাবে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যায়, অর্থাৎ শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
৩. ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা
ঘুমের অভাব আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। কম ঘুম হলে ক্ষুধার হরমোন গ্রেহলিন বাড়ে এবং তৃপ্তির হরমোন লেপটিন কমে যায়। এর ফলে সারাক্ষণ ক্ষুধা লাগে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এছাড়াও, ঘুমের অভাবে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়, যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া
ঘুম হলো শরীরের মেরামতের সময়। যখন আপনি ঘুমান, তখন শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং সাইটোকিন তৈরি করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে আপনি সহজেই সর্দি, ফ্লু এবং অন্যান্য সংক্রমণের শিকার হন এবং গুরুতর রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যা আপনার মেজাজ, অনুভূতি এবং মানসিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘমেয়াদী কম ঘুম বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ, মনোযোগের অভাব এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি হ্যালুসিনেশন বা সিদ্ধান্তহীনতার মতো গুরুতর সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
৬. হজমের সমস্যা
কম ঘুম হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গগুলোকে ঠিকমতো কাজ করতে বাধা দেয়। পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসৃত হয় না, যার ফলে বদহজম, পেট ফাঁপা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম অত্যন্ত জরুরি। যদি আপনার নিয়মিত ঘুম না আসে, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একটি সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ল্যাপটপের ব্যবহার কমানো, এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা আপনাকে ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
ফারুক