
শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অনেকে সময় দেন। কিন্তু শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক, তার যত্নে আমরা কতটা সচেতন? প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সময় দিলেই মস্তিষ্ক হতে পারে আরও সচল, স্মরণশক্তি বাড়তে পারে এবং বয়সজনিত অবক্ষয়ও ধীর হতে পারে। এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে, যেগুলো খুবই সহজ এবং প্রতিদিনের দিনচক্রেই জুড়ে দেওয়া যায়।
সঙ্গীত শোনা
গান শোনা কিংবা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শুধু আনন্দের জন্য নয়, মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। গবেষণা বলছে, সঙ্গীত মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, মনোযোগ ও স্মরণশক্তি উন্নত করে এবং বয়সজনিত স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও অ্যালঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া ভাষাগত দক্ষতা ও বোঝার ক্ষমতাও বাড়ে, ফলে নতুন ভাষা শেখাও সহজ হয়।
ধাঁধা বা পাজল সমাধান
ক্রসওয়ার্ড, জিগস পাজল বা যেকোনো ধরণের ধাঁধা সমাধান মস্তিষ্কের বিশ্লেষণ ও সমস্যার সমাধান ক্ষমতা বাড়ায়। এতে সৃজনশীলতাও বাড়ে এবং স্মৃতিশক্তি মজবুত হয়। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে, পাজল সমাধান নিয়মিতভাবে করলে ডিমেনশিয়ার মতো রোগের উপসর্গও বিলম্বিত হতে পারে।
নতুন কিছু শেখা
প্রতিদিন একটি নতুন তথ্য জানা কিংবা একটি তথ্যপূর্ণ লেখা পড়ার অভ্যাস নিউরোপ্লাস্টিসি বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নতুন কিছু শেখা মানেই আরও ভালো সামাজিক সংযোগ, সমস্যার সমাধানে দক্ষতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর উপলব্ধি।
ধ্যান বা মেডিটেশন
ধ্যান শুধু মানসিক প্রশান্তির জন্য নয়, এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার জন্যও অত্যন্ত উপকারী। মেডিটেশন স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়, মনোযোগের পরিধি বাড়ায় এবং বয়সজনিত স্মৃতিভ্রষ্টতা কমায়। নিয়মিত ধ্যান ঘুমের মান বাড়ায়, আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের (গ্রে ম্যাটার) বৃদ্ধি ঘটায়।
ভিন্ন রুটে চলাফেরা
প্রতিদিন কাজ বা বাড়ি ফেরার পথে রুট পরিবর্তন করাই হতে পারে এক ধরনের মস্তিষ্কের ব্যায়াম। অন্য যানবাহন ব্যবহার করলেও একই ফল পাওয়া যায়। নতুন রাস্তায় চলাফেরা মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি ও ‘স্পেশিয়াল ওরিয়েন্টেশন’ উন্নত করে অর্থাৎ, চারপাশের পরিবেশ ও নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে।
নাচ
নাচ শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি মস্তিষ্কের জন্যও দুর্দান্ত ব্যায়াম। কোনো কোরিওগ্রাফি শেখা ও সংগীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা মস্তিষ্কের নিউরনকে উদ্দীপ্ত করে। এতে মনোযোগ, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং বয়সজনিত কগনিটিভ দুর্বলতা রোধ হয়।
মেমোরি টেস্ট করা
নিজের স্মৃতি যাচাই করার একটি মজার উপায় হতে পারে ছোট একটি লেখা পড়ে তা মনে রাখার চেষ্টা, কিংবা অতীতের কোনো জায়গা বা ঘটনার বিশদ বিবরণ স্মরণ করার চর্চা। এমন অনুশীলন মনোযোগ বাড়ায়, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমায় এবং দৈনন্দিন জীবনে কাজে দেয়।
প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সময় দিলেই মস্তিষ্ক হয়ে উঠতে পারে আরও সজাগ, স্মার্ট ও মজবুত। তাই শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের যত্নও এখন সময়ের দাবি। এই সহজ অভ্যাসগুলো রপ্ত করে নিতে পারলে আপনি প্রতিদিনই নিজের ভবিষ্যতের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।
সূত্র:https://tinyurl.com/mut42cy5
আফরোজা