
ছবিঃ সংগৃহীত
দিনভর কিছু না কিছু মুখে তুলে নেওয়ার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে—চা খাওয়ার সময় একটা বিস্কুট, দুপুরের খাবারের পর এক টুকরো চকলেট, অথবা রাতে টিভি দেখতে দেখতে চিপস। এই অভ্যাসকে আমরা অনেক সময় পাত্তা দিই না। কিন্তু কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রধান ড. সুবাষ আগাল জানালেন, এই ‘সিরিয়াল স্ন্যাকিং’ অভ্যাস ধীরে ধীরে আপনার পরিপাকতন্ত্রকে বিপদে ফেলতে পারে।
অসচেতন স্ন্যাকিংয়ের ৩টি বড় বিপদ
১. অন্ত্রের স্বাভাবিক পরিষ্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়
আমাদের হজমতন্ত্রে Migrating Motor Complex (MMC) নামে এক ধরনের ‘ক্লিনিং সিস্টেম’ কাজ করে, যা খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে অন্ত্র পরিষ্কার রাখে। কিন্তু আপনি যখন কিছু খেয়ে ফেলেন—হোক না সামান্য কিছু—তখনই এই প্রক্রিয়া থেমে যায়। ফলে হজম না হওয়া খাবার ও ব্যাকটেরিয়া জমে যায়, যা গ্যাস্ট্রিক, ফাঁপাভাব বা SIBO (Small Intestinal Bacterial Overgrowth)-এর কারণ হতে পারে।
২. অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়
নিয়মিত চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে অন্ত্রে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি (বদ হজম সৃষ্টিকারী) ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে যেতে থাকে। ফলে হজমের ক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ শক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩. হজমতন্ত্রের বিশ্রাম ও মেরামতের সময় নষ্ট হয়
অন্ত্রও একটি অঙ্গ, যা মেরামতের জন্য বিশ্রাম চায়। সারাক্ষণ খাওয়া চলতে থাকলে হজমতন্ত্র নতুন এনজাইম তৈরি বা অন্ত্রের কোষ পুনর্গঠনের সুযোগ পায় না। এর ফলে অম্লনালিকাসহ (Acid reflux) হজমে ধীরগতি, পুষ্টি শোষণে সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়।
কীভাবে সঠিকভাবে স্ন্যাকিং করবেন?
ড. আগাল বলেন, “স্ন্যাকিং একেবারে ছেড়ে দেওয়াই সমাধান নয়। বরং এটিকে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। দিনের তিনবেলা প্রধান খাবারের মাঝে ৪-৫ ঘণ্টা বিরতি দিন। এর মাঝে ১-২টি পুষ্টিকর, ফাইবারসমৃদ্ধ স্ন্যাকস খান।”
উদাহরণস্বরূপ, দুপুরের পর এক বাটি ফল বা ভেজানো বাদাম হতে পারে ভালো স্ন্যাকস। এছাড়া ফার্মেন্টেড দই, ফলমূল, শাকসবজি ও সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য খুব ভালো।
ড. আগাল পরামর্শ দিয়েছেন, স্ন্যাকিং যেন ইচ্ছাকৃত হয়, তা যেন অভ্যাসগত বা আকস্মিক না হয়। “সতর্কভাবে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস বেছে নিয়ে এবং সঠিক সময় ও ব্যবধানে খাওয়ার অভ্যাস করলে অন্ত্র থাকবে সুস্থ, শরীর থাকবে হালকা।”
নোভা