ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন এভিয়াতার—গাজার মাটিতে আর কতদিন বাঁচবেন তিনি?

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ৪ আগস্ট ২০২৫

নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন এভিয়াতার—গাজার মাটিতে আর কতদিন বাঁচবেন তিনি?

ছবি : বিবিসি

গাজায় কঙ্কালসার অবস্থায় ইসরায়েলি জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের শীর্ষ নেতারা একে ‘জঘন্য’ এবং ‘অমানবিক’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। মানবিক সহায়তা দিতে ও জিম্মিদের অবস্থান নিশ্চিত করতে অবিলম্বে রেড ক্রসের প্রবেশাধিকার চেয়েছে বিভিন্ন পক্ষ।

গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এবং হামাস দুটি ভিডিও প্রকাশ করে। একটিতে দেখা যায় ২১ বছরের রম ব্রাসলাভস্কি কাঁদছেন, বলছেন তার খাবার ও পানি ফুরিয়ে গেছে, দাঁড়াতেও পারছেন না। অন্যটিতে ২৪ বছরের এভিয়াতার ডেভিড বলেন, “আমি কয়েকদিন ধরে কিছুই খাইনি” এবং নিজেই নিজের কবর খুঁড়ছেন।

দুইজনই ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ‘নোভা’ মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে অপহৃত হন। ইসরায়েল বলছে, এখনো ৪৯ জন জিম্মি গাজায় অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনকে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “প্রচারমূলক উদ্দেশ্যে এইভাবে জিম্মিদের ব্যবহার বিকৃত ও জঘন্য।” জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি না হলে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই ওঠে না।

রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রেড ক্রসের আঞ্চলিক প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন এবং অবিলম্বে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর অনুরোধ জানান। রেড ক্রস জানিয়েছে, তারা ভিডিওগুলো দেখে "মর্মাহত" এবং জিম্মিদের জীবন-সংকটাপন্ন অবস্থা এখন স্পষ্ট।

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড বলেছে, রেড ক্রস যদি নিয়মিত মানবিক করিডোর ও বিমান হামলা বন্ধ রাখার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তারা খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে সম্মত হবে।

এই ইস্যুতে রেড ক্রসের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক চলছে। গাজায় জিম্মিদের সহায়তা করতে না পারার জন্য ইসরায়েলে সংস্থাটি সমালোচনার মুখে পড়েছে। আবার, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের সাথেও তাদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না—যার কারণে ফিলিস্তিনিরাও অসন্তুষ্ট।

ইতিমধ্যে তেল আবিবে আবারও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে জনতা। রম ও এভিয়াতারের পরিবার একটি সমাবেশে বলেন, “সবাইকে এখনই এই নরক থেকে মুক্ত করতে হবে।”

এদিকে জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, অপুষ্টিতে ১৭৫ জন, যার মধ্যে ৯৩টি শিশু, প্রাণ হারিয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, দুর্ভিক্ষের অভিযোগ একটি ‘হামাসের প্রপাগান্ডা’। তবে বিশ্বজুড়ে জনমত ক্রমেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। বিশেষ করে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র সামনে আসায় বিশ্বনেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে যুদ্ধবিরতির ও রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগোতে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, “হামাস এক নিষ্ঠুরতার প্রতীক। জিম্মিদের মুক্তি, যুদ্ধবিরতি এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধান এখন জরুরি।”

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Mily

×