ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় রেড ক্রিসেন্টের সদর দপ্তরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১

প্রকাশিত: ০০:২৮, ৪ আগস্ট ২০২৫

গাজায় রেড ক্রিসেন্টের সদর দপ্তরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (PRCS) সদর দপ্তরে এক কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত তিনজন।

রেড ক্রিসেন্ট জানায়, রবিবার ভোররাতে এই হামলা চালানো হয় এবং এতে ভবনে আগুন ধরে যায়। সংস্থাটি দাবি করেছে, এটি একটি ‘ইচ্ছাকৃত হামলা’ এবং তাদের সদর দপ্তর স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল রেড ক্রিসেন্টের প্রতীক দিয়ে, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে পরিচিত।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, রাত ১২টার কিছু পর ভবনের ওপর তলার দিকে প্রথম গোলাবর্ষণ করা হয়। এরপর যখন কর্মীরা ভবনের ক্ষতি নিরূপণ ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন, তখন দ্বিতীয় দফা গোলাবর্ষণ করা হয় দ্বিতীয় তলায় এবং তারপর সরাসরি হামলা চালানো হয় নিচতলায়।

নিহত কর্মীর নাম ওমর ইস্লিম। তিনি রেড ক্রিসেন্টের একজন স্টাফ ছিলেন। আহতদের মধ্যে সংস্থার আরও দুই কর্মী ছাড়াও একজন বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন।

সংস্থাটি বলেছে, "এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। আমরা আবারও জবাবদিহিতা ও মানবিক এবং চিকিৎসা সহায়তায় নিয়োজিত সকল কর্মীদের সুরক্ষার আহ্বান জানাই।"

রেড ক্রিসেন্ট আরও জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় তাদের ৫১ জন কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৯ জন মানবিক সহায়তা প্রদানকালে প্রাণ হারান।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তারা PRCS সদর দপ্তরে হামলার দাবি পর্যালোচনা করছে। তারা বলেছে, খান ইউনিসে এক অভিযানের সময় ‘অংশগ্রহণ না করা কিছু ব্যক্তি’ হতাহত হয়ে থাকতে পারেন।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর এই ঘটনায় ‘গভীর ক্ষোভ ও হতবাক প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে এবং স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

রবিবার হামাস-চালিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন সাহায্য নিতে যাওয়ার পথে মারা যান।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ১,৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অধিকাংশই নিহত হয়েছেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (GHF) বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি।

GHF অবশ্য জাতিসংঘের উল্লেখ করা ৮৫৯ জন নিহত হওয়ার তথ্য অস্বীকার করেছে। ইসরায়েল দাবি করছে, হামাস সাহায্য কেন্দ্রগুলোর আশপাশে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে এবং তারা সাধারণ জনগণের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালায় না।

এদিকে, মিশরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুটি জ্বালানি ট্যাংকার গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সামগ্রীর মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পর malnutrition বা অপুষ্টিজনিত কারণে ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জন শিশু। রবিবার অপুষ্টিতে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্যের প্রবাহ বন্ধ করেনি। বরং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবিক সংস্থা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

রবিবার আইডিএফ জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামের সহায়তায় গাজার দক্ষিণ ও উত্তরে খাবার সরবরাহ করতে ১৩৬টি প্যাকেজ আকাশপথে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর যুদ্ধ শুরু হয়। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এর পর থেকে গাজা জুড়ে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬০,৮৩৯ জন নিহত হয়েছেন বলে হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

নোভা

×