ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় রেড ক্রিসেন্ট সদর দফতরে কর্মী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৪ আগস্ট ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় রেড ক্রিসেন্ট সদর দফতরে কর্মী নিহত

ছবি : বিবিসি

ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি হামলায় গাজার খান ইউনিসে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (PRCS) সদর দফতরে এক কর্মী নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। সংস্থাটি এই হামলাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ উল্লেখ করে বলেছে, তাদের ভবনটি ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে পরিচিত এবং স্পষ্টভাবে রেড ক্রিসেন্টের প্রতীক চিহ্নিত ছিল।

রবিবার ভোরে সংঘটিত এ হামলায় ভবনে আগুন ধরে যায়। PRCS এক বিবৃতিতে জানায়, “মধ্যরাতের কিছু পরেই ইসরায়েলি আর্টিলারির গোলা ভবনের ওপরের তলায় পড়ে। কর্মীরা যখন উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন, তখন দ্বিতীয় দফায় দ্বিতীয় তলায় গোলাবর্ষণ হয় এবং পরক্ষণেই নিচতলাও সরাসরি লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়।”

নিহত কর্মীর নাম ওমর ইস্লিম। আহতদের মধ্যে রয়েছেন PRCS-এর আরও দুই কর্মী এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি, যিনি আগুন নেভাতে সহায়তা করছিলেন। সংস্থাটি বলেছে, “এটি কোনো ভুল নয়। আমরা মানবিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতার দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।”

PRCS আরও জানায়, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তাদের ৫১ জন কর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৯ জন মানবিক দায়িত্ব পালনের সময় প্রাণ হারান।

এই ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এক স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ত্রাণকেন্দ্রে গুলিতে নিহত আরও ৬৫

এদিন গাজার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০৪ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে হামাস-চালিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অন্তত ৬৫ জন নিহত হন ত্রাণ নিতে গিয়ে।

নুসাইরাতের আল-আওয়দা হাসপাতাল জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। বিতরণ কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে Gaza Humanitarian Foundation (GHF), যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় পরিচালিত।

ইসরায়েলি বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, তারা আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে। IDF জানায়, “একটি জনতা আমাদের বাহিনীর দিকে এগিয়ে আসছিল যা হুমিকর আচরণ ছিল। তাই শত শত মিটার দূর থেকেই গুলি ছোড়া হয়।”

বিবিসি একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, GHF বিতরণ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মিটার দূরের একটি জায়গায় গুলি ছোড়ার শব্দ ও দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে সাধারণ মানুষ নিচু হয়ে বসে ছিল। তবে ভিডিওতে কারা গুলি চালিয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ১,৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ GHF বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশেই মারা গেছেন। তবে GHF জাতিসংঘের দাবি অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কেন্দ্রের আশেপাশে এত লোক নিহত হয়নি।

মানবিক সংকট ও ত্রাণের ঘাটতি চরমে

গাজায় চলমান ১১ সপ্তাহব্যাপী অবরোধে চিকিৎসা ও খাদ্যসংকট তীব্র হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

রবিবার ইসরায়েল জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামের সঙ্গে সমন্বয়ে ১৩৬টি খাদ্যপ্যাকেট বিমান থেকে ফেলা হয়েছে।

এদিকে, হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টিতে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৫ জন, যার মধ্যে ৯৩ জনই শিশু।

ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ত্রাণ আটকাচ্ছে না বরং জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো কার্যকরভাবে বিতরণ করতে পারছে না।

পটভূমি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০,৮৩৯ জনে।


তথ্যসূত্র: বিবিসি, PRCS, UN, Gaza Health Ministry

Mily

×