
ছবি: সংগৃহীত
আমরা প্রতিদিন যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি, সেই বাতাসেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণের সংস্পর্শে থাকলে মস্তিষ্কে ক্ষয় নেমে আসে, বাড়ে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি, বিশেষ করে আলঝেইমারস ও ভাসকুলার ডিমেনশিয়ার মতো জটিল মানসিক অবক্ষয়ের রোগ।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (MRC) এপিডেমিওলজি ইউনিট পরিচালিত একটি গবেষণায় এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। ল্যানসেট প্লানেটারি হেলথ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, বাতাসে ভেসে থাকা সূক্ষ্ম বস্তুকণা (PM2.5), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO₂) এবং স্যুট বা ধোঁয়ার মধ্যে রয়েছে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির সরাসরি যোগসূত্র।
ডিমেনশিয়া বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৫৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৫২.৮ মিলিয়নে। উন্নত বিশ্বে কিছুটা কমলেও, বৈশ্বিক স্কেলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
কী বলছে গবেষণা?
গবেষকরা ৫১টি পৃথক গবেষণা বিশ্লেষণ করেছেন, যাতে ২৯ মিলিয়নেরও বেশি অংশগ্রহণকারী ছিলেন। এদের বেশিরভাগই উচ্চ আয়ের দেশের বাসিন্দা। বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনটি প্রধান দূষণকারী উপাদানের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে:
PM2.5: যানবাহনের ধোঁয়া, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, কাঠ বা কয়লা পোড়ানো এবং নির্মাণ কাজ থেকে নির্গত অতিক্ষুদ্র কণা। ফুসফুসে গিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO₂): ডিজেলচালিত যানবাহন, শিল্প-কারখানা এবং গ্যাস চুলা থেকে নির্গত হয়। শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ায়।
ধোঁয়া: যানবাহনের ধোঁয়া ও কাঠ পোড়ানো থেকে উৎপন্ন। আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে এবং ফুসফুসে ঢুকে হৃৎপিণ্ডের রোগ বাড়াতে পারে।
গবেষণার ফলাফল
- প্রতি ১০ μg/m³ PM2.5 বৃদ্ধিতে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে ১৭%।
- ১০ μg/m³ NO₂ বৃদ্ধিতে ঝুঁকি বাড়ে ৩%।
- প্রতি ১ μg/m³ ধোঁয়া বৃদ্ধিতে ঝুঁকি বাড়ে ১৩%।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩ সালে লন্ডনের গড় PM2.5 মাত্রা ছিল ঠিক ১০ μg/m³—যেটি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকির সীমারেখা ছুঁয়ে ফেলেছে।
কীভাবে বায়ুদূষণ ডিমেনশিয়া তৈরি করে?
বায়ুদূষণ সরাসরি মস্তিষ্কে প্রবেশ করে কিংবা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। এগুলো ধীরে ধীরে স্নায়ুগুলোকে ক্ষয় করে ডিমেনশিয়ার দিকে ঠেলে দেয়।
‘বায়ুদূষণ যদি ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী হয়, তবে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য, সামাজিক, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে উপকার বয়ে আনবে,’ বলেন গবেষক দলের প্রধান ড. হানিন খ্রেইস।
অন্যদিকে, সহ-গবেষক ক্লেয়ার রগওস্কি বলেন, ‘পরিবহন ও শিল্প খাতের দূষণ কমাতে কঠোর নীতিমালার প্রয়োজন। এটি শুধু স্বাস্থ্য নয়, নীতিনির্ধারণ, নগর পরিকল্পনা ও পরিবেশ রক্ষার সমন্বিত প্রয়াসের দাবি রাখে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব