
ছবিঃ সংগৃহীত
চীনে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ধনী ব্যবসায়ী সেজে একে একে ছয়টি বিয়ে করেন ওই ব্যক্তি। এরপর পাঁচ প্রাক্তন স্ত্রীসহ মোট ২০ জনের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ ইউয়ান (মার্কিন ডলার হিসাবে প্রায় ২৮০,০০০ ডলার) হাতিয়ে নেন তিনি।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের জিয়াং শহরের আদালত ৩৯ বছর বয়সী লিউ (ল姓 প্রকাশ করা হয়েছে) নামের এই প্রতারককে দোষী সাব্যস্ত করেন। South China Morning Post (SCMP) ও চীনা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম CCTV-এর বরাতে জানা যায়, গত এক দশক ধরে লিউ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতারণার চক্র চালিয়ে আসছিলেন।
ভুয়া বিলাসিতা, সাজানো ব্যবসায়ী জীবন
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লিউ ছয়জন নারীকে বিয়ে করেন। সবাইকে কিছু সময় পর তালাক দেন, তবে শেষের পাঁচ স্ত্রী ও তাদের পরিবারের কাছ থেকেই তিনি বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করেন।
লিউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিলাসবহুল গাড়ির পাশে ছবি পোস্ট করতেন—যেগুলো তিনি আসলে ভাড়া নিতেন। নিজেকে খেলনার ব্যবসায় সফল উদ্যোক্তা দাবি করে নানা অজুহাতে টাকা ধার নিতেন। কারও কাছ থেকে স্টাফদের বেতন দেওয়ার কথা বলে, আবার কারও কাছে বাড়ি কেনার নাম করে টাকা নেন।
একটি ঘটনায় দেখা গেছে, প্রেমিকার সহানুভূতি আদায়ের জন্য নিজের মায়ের নামে ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট বানিয়েছেন তিনি। টাকা ফেরত চাইলে অজুহাত দিতেন, বলতেন "সময় লাগবে"।
প্রেম, প্রভাব, প্রতারণা
এক প্রাক্তন স্ত্রী বলেন, "সে খুবই মিষ্টি কথা বলে, মেয়েদের সহজে প্রভাবিত করতে পারে। আমি জানতাম সে একবার বিবাহিত ছিল, তবুও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম।"
আরেকজন জানান, "প্রথম দেখাতেই সে ধনী ও সৎ মানুষ বলে মনে হয়েছিল। ভাবতেই পারিনি সে এমন প্রতারক। আমি ৪ লাখ ইউয়ান দিয়ে প্রতারিত হয়েছি, আজ খুব আফসোস হচ্ছে।"
ষষ্ঠ স্ত্রী ফাঁস করেন প্রতারণার জাল
২০২৩ সালের শেষ দিকে ষষ্ঠ স্ত্রী শিয়াওলু পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে ফাঁস হয় পুরো প্রতারণার চিত্র। জুনে দেখা হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় তারা বিয়ে করেন। এরপর লিউ তাকে চাকরি ছাড়তে বলেন, নিজের ফ্ল্যাট বন্ধক রাখতে বলেন, এবং পরিবার ও অনলাইন লোন থেকে টাকা নিতে বলেন। সব টাকাই লিউ নিজের কাছে রাখেন—কিছুই ফেরত দেননি।
শিয়াওলু পুলিশের কাছে জানান, “আমি তার কারণে প্রতারিত হয়েছি, চাকরি হারিয়েছি, বাসা হারিয়েছি এবং গর্ভবতী হয়েছি। এখন বিশাল ঋণের বোঝা আমার কাঁধে। আমি আত্মহত্যার কথাও ভাবছি।”
নারীদের প্রতি ঘৃণা থেকেই প্রতারণা!
আটকের পর লিউ স্বীকার করেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নারীদের লক্ষ্য করে প্রতারণা করতেন। তার বক্তব্য ছিল, “আমি নারীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাই। তারা বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং খুবই ভোগবাদী।”
আদালতের রায়
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তার কাজগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ। তাই এটিকে প্রতারণার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।”
চীনে এই ঘটনা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন—বিশ্বাস আর আবেগকে পুঁজি করে প্রতারণা এখন সমাজে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। তাই সম্পর্কের বাইরেও সজাগ থাকা জরুরি।
বিশ্বাসের নামে এমন প্রতারণা, সমাজকে কাঁপিয়ে দিলো লিউর কাহিনি।
ইমরান