
ছবি: সংগৃহীত
এমন একটি কোম্পানির নাম বলুন তো, যেটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে গোটা পৃথিবী যেন থেমে যাবে? শুনে আপনার মনে হয়তো প্রথমে আসছে Facebook, YouTube, Amazon বা Google-এর মতো জনপ্রিয় প্রযুক্তি জায়ান্টদের নাম। কিন্তু না, এই খেলাটা এখানে একটু ভিন্নরকম।
আসলে সেই কোম্পানিটি হলো টিএসএমসি (TSMC) – একটি নাম যা অনেকের কাছেই এখনও অপরিচিত। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানটির ওপরই টিকে আছে বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মোবাইল, কম্পিউটার, গাড়ি, সামরিক প্রযুক্তি এমনকি স্পেস মিশন পর্যন্ত।
টিএসএমসি এমন একটি শিল্পী, যিনি নিজে মঞ্চে ওঠেন না, কিন্তু তার হাতেই থাকে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের সমস্ত ব্যবস্থা। অথচ কৃতিত্বটা পায় অন্যরা। এই কোম্পানি নিজের নামে কোনো স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন বানায় না। বরং, Apple, Samsung, AMD, Qualcomm-এর মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর ডিজাইন করা চিপগুলোই তারা তৈরি করে দেয় বিশ্বের সবচেয়ে অ্যাডভান্স সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি দিয়ে।
আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগে, তাইওয়ানের এক ছোট্ট শহরে মরিস চ্যাং নামের এক সেমিকন্ডাক্টর গুরু গড়ে তুলেছিলেন TSMC— Taiwan Semiconductor Manufacturing Company। তখন কেউ ভাবতেই পারেনি, এই কোম্পানি একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
টিএসএমসি তৈরি করে ৫ ন্যানোমিটার, এমনকি ৩ ন্যানোমিটার পর্যন্ত চিপ, যা এতটাই ক্ষুদ্র ও শক্তিশালী যে, এক ইঞ্চি চুলের ভেতরে লাখ লাখ চিপ ঢুকে যেতে পারে। এখনো পর্যন্ত এত উন্নত প্রযুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্বের আর কোনো কোম্পানি।
এদের কারখানায় প্রতি মাসে তৈরি হয় কোটি কোটি চিপ। গোটা বিশ্বের স্মার্টফোন, গাড়ি, ল্যাপটপ, ডেটা সেন্টার, সামরিক যন্ত্র – সব কিছুর জন্যই চিপ আসে এই কোম্পানি থেকে।
একবার কল্পনা করুন: আপনি ঘুম থেকে উঠে ফোন চার্জ দিলেন, কিন্তু কোনো আপডেট আসছে না। বাজারে নেই কোনো নতুন ফোন। ফেসবুক, ইউটিউব কাজ করছে না। গ্যাজেটের দাম আকাশছোঁয়া। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে। এমনকি সামরিক গবেষণা, মহাকাশ অভিযানও বন্ধ হয়ে যাবে।
এমন সংস্থা, যার অস্তিত্বই নির্ধারণ করে আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ— সেই অদৃশ্য অথচ অপরিহার্য মহানায়ক হলো টিএসএমসি।
ছামিয়া