ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

১০৭ বছর বয়সেও প্রাণবন্ত! মিলড্রেড ব্যারনের দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ৪ আগস্ট ২০২৫

১০৭ বছর বয়সেও প্রাণবন্ত! মিলড্রেড ব্যারনের দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?

ছবি: সংগৃহীত।

নিউ জার্সির ফ্রি‌হোল্ড শহরের বাসিন্দা ১০৭ বছর বয়সী মিলড্রেড ব্যারন এখনও জীবনের প্রতি আগ্রহ হারাননি। বরং প্রতিটি দিন তিনি উদযাপন করেন কৃতজ্ঞতা ও প্রাণশক্তি নিয়ে। পরিবার, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ এক কমিউনিটির সঙ্গে সময় কাটানো এই নারীর জীবনের মূলমন্ত্র: "শান্ত থাকো, ধৈর্য ধরো, এবং মনে রেখো - 'এ সময়ও পেরিয়ে যাবে’।”
এই সহজ অথচ গভীর দর্শন তাকে জীবনের বহু কঠিন সময় - যেমন আমেরিকায় প্রহিবিশন যুগ, মহামন্দা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও দৃঢ়ভাবে বাঁচতে সহায়তা করেছে। মিলড্রেডের জীবন কেবল দীর্ঘজীবনের গল্প নয়, এটি এক অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা - স্থিতিশীলতা, ইতিবাচকতা ও জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।

রুটি লাইনের শিশু থেকে চার দশকের কর্মজীবন
১৯১৮ সালে ব্রুকলিনে জন্ম নেওয়া মিলড্রেড শৈশবে চরম দারিদ্র্য দেখেছেন। তিনি মনে করেন, সেই অভিজ্ঞতা তাকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছে। “আমরা রুটি লাইনে দাঁড়াতাম, মা একটা আলুর বস্তা দিয়েই পাঁচ সন্তানকে চালাতেন,” স্মৃতিচারণ করেন তিনি। তবে তিক্ততা নয়, সেই স্মৃতি তার চোখে সাহস ও সহ্যশক্তির পাঠ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন পুরুষেরা যুদ্ধে, তখন মিলড্রেড নিয়েছিলেন হিসাবরক্ষণের চাকরি। এরপর প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি এই পেশাতেই ছিলেন। এটাই তার জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার ভিত গড়ে দেয়। চাকরিজীবনের সময় থেকেই তার মনোভাব ছিল - শান্ত থেকে, মনোযোগ ধরে রেখে কাজ করে যাওয়া।

চলছেন থেমে না থেকে: ঝাল খাবার, শিল্প আর মজাদার জীবন
চাকরি থেকে অবসরের পরও মিলড্রেড থেমে যাননি। বরং ১০০তম জন্মদিনের কিছু আগে অ্যাপলউড ভিলেজ নামের সিনিয়র লিভিং কমিউনিটিতে উঠে এসে নতুন শখের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি থ্রিডি আর্ট প্রজেক্ট করেন, পার্টি আয়োজনের দায়িত্ব নেন এবং ককটেল আওয়ারেও অংশ নেন, যেখানে তার পছন্দের পানীয় জিনজার এল (মাঝে মাঝে তিনি মজা করে বলেন, আসলে বিয়ারই বেশি ভালো লাগত!)।

৯৫ বছর বয়সী তার এক বন্ধু আরলাইন ফিশার জানান, মিলড্রেড সবসময় নিজের জলাপেনো (মরিচ) সঙ্গে রাখেন - ঝাল খাওয়ার প্রতি ভালোবাসা তার চিরন্তন। এই আনন্দময় মনোভাব এবং বয়সভিত্তিক “নিয়ম” না মানার সাহসী প্রবণতাই তাকে সবার মাঝে প্রাণবন্ত করে রেখেছে।

পরিবারই জীবনের আনন্দ: সৃজনশীল উপায়ে যোগাযোগ
মিলড্রেডের জীবনে পরিবারের স্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার ৮০ বছর বয়সী মেয়ে বনি গ্রিনস্টাইন, দুইজন নাতি-নাতনি এবং পাঁচজন প্রপৌত্র রয়েছে। যদিও মিলড্রেড হালকা শ্রবণ সমস্যায় ভোগেন, তবুও মা-মেয়ের মধ্যে যোগাযোগে কোনো সমস্যা হয় না - কারণ বনি কথা বলেন একটি পেপার টাওয়েল রোলের ভেতর দিয়ে, যাতে শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়! এই সৃজনশীল পদ্ধতি তাদের সম্পর্কের উষ্ণতা ও ইতিবাচক মানসিকতারই প্রতিফলন।

বিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মিলড্রেড বলেন, “আমি চাই, পৃথিবীটা শান্ত হোক। সবখানে। আমি হয়তো সেটা দেখতে পারব না, কিন্তু আশা করি, কোনো একদিন তা হবেই।” যুদ্ধ, দারিদ্র্য, সামাজিক পরিবর্তন - সব কিছু দেখেও তিনি আশাবাদীই রয়ে গেছেন।

শতবর্ষ জীবনের মূলমন্ত্র
মিলড্রেড ব্যারনের জীবনের মূল দর্শন - “এই সময়ও পেরিয়ে যাবে”- তাকে মানসিকভাবে স্থির, পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম ও ইতিবাচক করে তুলেছে। তার উদাহরণ প্রমাণ করে, দীর্ঘজীবনের জন্য শুধুই বয়স নয়, প্রয়োজন সচেতন জীবনচর্চা, সম্পর্কের গভীরতা, আনন্দদায়ক শখ এবং প্রতিকূলতার মধ্যেও সাহসী মনোভাব।

২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, নিউ জার্সিতে মিলড্রেডের মতো ২,৩৬৭ জন শতায়ু মানুষ আছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে মিলড্রেড আলাদা - কারণ বয়স নয়, তার জীবনদর্শনই তাকে অনন্য করে তুলেছে।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×