
ছবি: সংগৃহীত
রোগ সৃষ্টি করে এমন ব্যাকটেরিয়া এবার গবেষণার অংশ হিসেবে পাঠানো হলো মহাকাশে। গত ১ আগস্ট স্পেসএক্স-এর ‘ক্রু-১১’ মিশনের মাধ্যমে চারজন নভোচারীর সঙ্গে এই ব্যাকটেরিয়া পাঠানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS)। ইসরায়েলের শেবা মেডিকেল সেন্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেস টেক প্রতিষ্ঠান স্পেসট্যাঙ্গো যৌথভাবে এই অভিনব গবেষণা পরিচালনা করছে।
মূল লক্ষ্য হলো মাইক্রোগ্রাভিটি বা মহাকাশের ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার আচরণ, বৃদ্ধি এবং জিনগত প্রকাশ কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা বিশ্লেষণ করা।
যে ব্যাকটেরিয়াগুলো পাঠানো হয়েছে
গবেষণায় ব্যবহৃত ব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- ই. কোলাই (E. coli)
- স্যালমোনেলা বংগোরি (Salmonella bongori)
- স্যালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম (Salmonella typhimurium)
এই সব ব্যাকটেরিয়াই মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। গবেষণায় দেখা হবে, মহাকাশে তাদের বৃদ্ধি এবং জিনের কার্যকারিতা কীভাবে ভিন্ন আচরণ করে।
প্রথমবারের মতো হবে জিনগত মানচিত্রায়ণ
শেবা মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ গবেষণা ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ওহাদ গাল-মর বলেন, ‘আমরা জানি মহাকাশে ব্যাকটেরিয়ার আচরণ বদলে যায়। তারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, জিনের প্রকাশ ভিন্ন হয়, এবং তারা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ও রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা প্রথমবারের মতো ব্যাকটেরিয়ার জিনগত প্রকাশের প্রোফাইল মহাকাশে কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারব।’
মহাকাশে ব্যাকটেরিয়ার আচরণ—একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি
গবেষণায় বলা হয়েছে, মহাকাশে ব্যাকটেরিয়া সাধারণত পৃথিবীর তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারে। মাইক্রোগ্রাভিটি, বিকিরণ, মানসিক চাপ ও নভোচারীদের শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে এই ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ মিশনে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।
এ কারণে মহাকাশচিকিৎসায় মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
পৃথিবীতে ফিরিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে ব্যাকটেরিয়া
গবেষক দল জানিয়েছে, মহাকাশে ব্যাকটেরিয়াগুলো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এরপর সেগুলোকে -৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। পরবর্তীতে পৃথিবীর ল্যাব ও মহাকাশের ল্যাবে জন্মানো ব্যাকটেরিয়ার জিনগত ও কার্যগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হবে।
অধ্যাপক গাল-মর বলেন, ‘এই গবেষণা শুধু মহাকাশযাত্রায় সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বোঝাতেই সাহায্য করবে না, বরং ব্যাকটেরিয়ার জিন নিয়ন্ত্রণ এবং শারীরবৃত্তীয় আচরণ সম্পর্কেও নতুন তথ্য দেবে।’
এই গবেষণা ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ মিশনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাকিব