
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে নীরবে ভয়াবহভাবে বাড়ছে কোলোরেক্টাল বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার। একসময় বয়স্কদের রোগ হিসেবে পরিচিত এই ক্যান্সারে এখন আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণ ও মধ্যবয়সীরাও। ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থার (IARC) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২,৭০০ থেকে ৩,০০০ জন মানুষ কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই রোগ শনাক্তের সময় উন্নত পর্যায়ে থাকেন, ফলে চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে।
কীভাবে বুঝবেন এই ক্যান্সার?
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো:
🔸 মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
🔸 পেটে ক্রমাগত ব্যথা বা অস্বস্তি
🔸 হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া
🔸 নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
🔸 অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি
🔸 মনে হতে পারে মল সম্পূর্ণ পরিশ্রুত হয়নি
এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কেন বাড়ছে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক জীবনধারাই এই ক্যান্সারের পেছনে অন্যতম কারণ। ফাস্ট ফুড, রেড মিট, কম ফাইবারযুক্ত খাবার, ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ ও শরীরচর্চার অভাব এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। একই সঙ্গে স্থূলতা ও বংশগত কারণও ভূমিকা রাখে।
প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব?
🔹 ৪৫ বছর বয়সের পর নিয়মিত স্ক্রিনিং (যেমন: কোলনোস্কোপি)
🔹 ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া
🔹 ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
🔹 শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
🔹 কোনোরকম উপসর্গ দেখা দিলে বিলম্ব না করে পরীক্ষা করানো
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ঢাকার ক্যান্সার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফারহানা ইসলাম বলেন, "এই ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ শেষ পর্যায়ে আসেন, যা খুবই দুঃখজনক। সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং চালু করা এখন সময়ের দাবি।"
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এখন আর ‘বয়সের রোগ’ নয়। অল্প বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই সময় থাকতে সাবধান হোন। নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করান এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোন।
স্বাস্থ্যই সম্পদ—এখনই সতর্ক না হলে পরে খেসারত দিতে হতে পারে।
Mily