
ছবি : সংগৃহীত
অগ্ন্যাশয় (Pancreas) আমাদের পরিপাকতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি হরমোন (যেমন ইনসুলিন) এবং পরিপাক এনজাইম তৈরি করে। তবে যখন এই অঙ্গের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হয়ে ক্যান্সারে রূপ নেয়, তখন তা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী। সমস্যার বড় দিক হলো—প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সারের লক্ষণ স্পষ্ট নয়, ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে দেরিতে।
কেন হয় অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের নির্দিষ্ট একটি কারণ নেই, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে:
1. ধূমপান – দীর্ঘমেয়াদে ধূমপায়ীদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্বিগুণ।
2. ডায়াবেটিস – দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি।
3. পারিবারিক ইতিহাস – পরিবারের কারও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
4. স্থূলতা – অতিরিক্ত ওজন ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও কারণ হতে পারে।
5. ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস – অগ্ন্যাশয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহও এক্ষেত্রে দায়ী।
কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় নিঃশব্দে শরীরের ক্ষতি করতে থাকে। তবে কিছু লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা যায়:
🔹 উপরের পেট বা পিঠে ব্যথা
🔹 হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
🔹 ক্ষুধামন্দা ও বমিভাব
🔹 চামড়া ও চোখের সাদা অংশে হলদেটে ভাব (জন্ডিস)
🔹 গা চুলকানো
🔹 গাঢ় রঙের প্রস্রাব ও ফ্যাকাশে পায়খানা
🔹 অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো দিয়ে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়:
🔸 আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান
🔸 এমআরআই
🔸 ইআরসিপি (ERCP) টেস্ট
🔸 বায়োপসি (টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ)
চিকিৎসা কী কী?
চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণ ও বিস্তারের উপর। সাধারণত নিচের পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হয়:
1. অপারেশন (Surgery) – যদি ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে টিউমার অপসারণ সম্ভব।
2. কেমোথেরাপি – ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে রাসায়নিক ওষুধ দেওয়া হয়।
3. রেডিওথেরাপি – রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
4. টার্গেটেড থেরাপি – নির্দিষ্ট জিন বা প্রোটিন টার্গেট করে থেরাপি দেওয়া হয়।
5. প্যালিয়েটিভ কেয়ার – যেসব ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়যোগ্য নয়, সেক্ষেত্রে ব্যথা ও উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক চিকিৎসা।
প্রতিরোধের উপায়
🔸ধূমপান ত্যাগ করা
🔸স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
🔸ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
🔸ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
🔸নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার একটি জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ হলেও সচেতনতা এবং দ্রুত শনাক্তকরণের মাধ্যমে জীবনের আয়ু বাড়ানো সম্ভব। তাই শরীরের অস্বাভাবিক যেকোনো পরিবর্তনে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
তথ্য: বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, WHO, Mayo Clinic, Johns Hopkins Medicine
Mily