
বাংলাদেশে বর্তমানে এক কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল। তাই গরুর মাংস এখন শুধু বড়লোকদের খাবারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিশ্বে এমন গরুর মাংসও আছে, যার এক কেজির দাম পৌঁছে যায় লক্ষ টাকার ওপরে। এই মাংসের নাম ওয়াগু বিফ, যা জাপানের বিশেষ জাতের গরু থেকে উৎপাদিত হয়।
ওয়াগু মানে কী?
ওয়াগু শব্দটি জাপানি ‘ওয়া’ অর্থাৎ জাপান এবং ‘গু’ বা ‘গিউ’ অর্থাৎ গরু থেকে এসেছে। তবে সব জাপানি গরুকে ওয়াগু বলা হয় না; শুধুমাত্র চারটি বিশেষ জাতের গরুকেই এই নাম দেয়া হয় জাপানিজ ব্ল্যাক, জাপানিজ ব্রাউন, জাপানিজ শর্ট হর্ন এবং জাপানিজ পোল্ড। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় হলো জাপানিজ ব্ল্যাক, যেখান থেকে পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি মার্বেলিং যুক্ত ওয়াগু বিফ।
ওয়াগু বিফের বৈশিষ্ট্য
মার্বেলিং বলতে বোঝায় গরুর মাংসের ভেতরে ছড়িয়ে থাকা চর্বির নকশা, যা দেখতে মার্বেলের মতো। এই চর্বি শুধু মাংসের স্বাদই বাড়ায় না, রান্নার সময় মাংসকে কোমল, রসে ভরপুর এবং সুগন্ধি করে তোলে। ওয়াগু বিফের মান অনুযায়ী তাকে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়, যেখানে এ ফাইভ গ্রেড সবচেয়ে উচ্চমানের ওয়াগু। এ গ্রেডের ওয়াগু বিফ এতটাই কোমল যে, ছুরি ব্যবহার না করেও শুধু চামচ দিয়ে কাটা যায়।
বিশেষ যত্ন আর লালন-পালন
ওয়াগু গরু পালন করা হয় এক বিশেষ শিল্পের মতো। বলা হয়, গরুগুলোকে বিয়ার খাওয়ানো হয়, বডি মাসাজ দেওয়া হয়, এমনকি ক্লাসিক্যাল মিউজিক শোনানো হয় তবে এসব কিছুটা অতিরঞ্জিত। সত্যিকার অর্থে গরুগুলোকে অত্যন্ত যত্নসহকারে লালন-পালন করা হয়। বিশেষ ধরনের শস্য, চাল, গম ও ভিটামিন মিশ্রিত খাদ্য খাওয়ানো হয় এবং প্রতিটি গরুর ওজন ও স্বাস্থ্যের বিস্তারিত হিসেব রাখা হয়। ক্ষুদ্রতম ভুলও মাংসের মান কমিয়ে দিতে পারে, যা কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
কোবে বিফ: জাতীয় গর্ব
জাপানের কোবে অঞ্চল থেকে উৎপাদিত ওয়াগু বিফকে বলা হয় কোবে বিফ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি মাংসের মধ্যে অন্যতম। এ ফাইভ গ্রেড কোবে বিফের প্রতি কেজির দাম হতে পারে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকারও বেশি। ছোট্ট একটি স্টেকের দামও হতে পারে প্রায় ১০,০০০ টাকা। জাপান সরকার এই গরুগুলোকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে এবং রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাইব্রিড ওয়াগু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু হাইব্রিড জাতের ওয়াগু উৎপাদিত হয়, তবে তা জাপানি ওয়াগুর জেনেটিক গুণগত মানের তুলনায় অনেক নীচে।
স্বাদ ও পুষ্টিগুণ
ওয়াগু বিফ খুবই কোমল, মুখে দিলেই গলে যায়। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি এসিড, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, যদিও অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। ওয়াগু বিফ শুধু মাংস নয়, এটি একটি ঐতিহ্য, গর্ব এবং পরিশীলিত স্বাদের প্রতীক।
Jahan