
ছবি:সংগৃহীত
পূর্ব এশিয়ায় আকাশ প্রতিরক্ষার হিসাব-নিকাশ এবার বড় ধাক্কা খেতে পারে—কারণ চীনের তৈরি জে-২০ ‘মাইটি ড্রাগন’ স্টিলথ ফাইটার নাকি সম্প্রতি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নজরদারি এড়িয়ে তসুশিমা প্রণালী পাড়ি দিয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত জাপান বা কোরিয়ার পক্ষ থেকে এই খবর নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার করা হয়নি, তবে চীনের রাষ্ট্রীয় টিভি সিসিটিভি এক সম্প্রচারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। তারা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স’-এর (PLAAF) অভিজাত প্রথম অ্যাভিয়েশন ব্রিগেড এর কর্মকাণ্ড দেখায়, যেখানে বলা হয় তারা তাইওয়ান, বাশি চ্যানেল এবং তসুশিমা প্রণালীতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
এই ব্রিগেডই প্রথম দিককার ইউনিট, যারা জে-২০ ফাইটার পেয়েছিল। তাদের বহরে এখন নতুন দুই আসনের জে-২০এস-ও যুক্ত হয়েছে, যা ড্রোন ও অন্যান্য যুদ্ধবিমানকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে।
তসুশিমা প্রণালী কেন গুরুত্বপূর্ণ?
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মাঝখানে অবস্থিত তসুশিমা প্রণালী পূর্ব চীন সাগর ও জাপান সাগরের সংযোগস্থল। এটি এমন এক পথ, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নজরদারির আওতায় থাকা আকাশপথগুলোর একটি।
এখানে রয়েছে জাপান, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েন করা অত্যাধুনিক রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যেমন THAAD এর AN/TPY-2 রাডার।
তবুও যদি চীনের জে-২০ এই এলাকাজুড়ে নজরদারি থাকা সত্ত্বেও ধরা না পড়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন উঠছে—এই শক্তিশালী প্রযুক্তিগুলো আদৌ কতটা কার্যকর?
জে-২০: চীনের গর্বের প্রতীক
চীনের চেংদু অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন নির্মিত জে-২০ মাইটি ড্রাগন হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমান, যা ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা বাহিনীতে যুক্ত হয়।
বিমানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
- রাডার ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা (স্টিলথ)
- দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বহনের সক্ষমতা (PL-15)
- দূর থেকে লক্ষ্য নির্ণয়ের জন্য AESA রাডার ও ইনফ্রারেড সিস্টেম
- তুলনামূলক কম শব্দ ও তাপ স্বাক্ষর
- সুপারক্রুজ গতি (অতিরিক্ত জ্বালানি ছাড়াই শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে উড্ডয়ন)
এটি চীনের নিজস্ব ইঞ্জিন WS-10C দ্বারা চালিত, এবং বর্তমানে সদর ও দক্ষিণ থিয়েটার কমান্ডে ব্যাপকভাবে মোতায়েন রয়েছে—তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে নজর রেখে।
কি বার্তা দিচ্ছে চীন?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধু একটি সামরিক মহড়া নয়—বরং চীনের পক্ষ থেকে কৌশলগত ও মানসিক চাপ সৃষ্টির একটি বার্তা। এর মাধ্যমে তারা জাপান, কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দেখাতে চায় যে, তাদের স্টিলথ প্রযুক্তি এখন এতটাই উন্নত যে আগাম ধরা পড়া ছাড়া গভীর এলাকায় প্রবেশ সম্ভব।
জাপান এবং কোরিয়া ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব যুদ্ধবিমান ও রাডার প্রযুক্তি উন্নত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। জাপান Global Combat Air Programme (GCAP) এবং কোরিয়া KF-21 প্রকল্পে নতুন গতি আনতে পারে।
এই ঘটনায় যদি সত্যতা থেকে থাকে, তাহলে সেটা শুধু একটি বিমান উড়ে যাওয়ার বিষয় নয়—বরং পুরো পূর্ব এশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষার নকশায় এক বড় ফাটল ধরানোর মতো ঘটনা।
এখনকার যুদ্ধ আর আগের মতো মাঠে-ময়দানে নয়—অদৃশ্য প্রযুক্তির লড়াই, কে কাকে আগে দেখতে পাবে, সেটাই মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এটি চীনের প্রযুক্তি সক্ষমতার প্রকাশ এবং আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা জোটগুলোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
মারিয়া