
ছবি:সংগৃহীত
বর্তমানে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কোন দেশের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সবচেয়ে শক্তিশালী – তাহলে চোখ বন্ধ করে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের।
বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক মাল্টিরোল ফাইটার F-35 Lightning II। আর একসময় শুধু আকাশযুদ্ধের জন্য তৈরি হলেও এখন অনেক কাজেই ব্যবহার হচ্ছে F-22 Raptor। চীনও পিছিয়ে নেই – তারা জোরকদমে বানাচ্ছে উন্নত যুদ্ধবিমান যেমন J-20 ও J-35।
অনেক যুদ্ধবিমান একসময় শুধু একটি কাজের জন্য তৈরি হলেও, সময়ের সঙ্গে তারা হয়েছে মাল্টিরোল। যেমন F-15 বা Eurofighter Typhoon, যাদের এখন আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার মতো ক্ষমতাও আছে।
মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান মানে কী?
মাল্টিরোল মানে এক কথায় – একটা যুদ্ধবিমান, অনেক কাজ।
আকাশে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ, শত্রুপক্ষের রাডার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিস্ক্রিয় করা, ভূমি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা, এমনকি বৈদ্যুতিক যুদ্ধও—সবই পারে এইসব মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান।
আগে যুদ্ধবিমান তৈরি হতো নির্দিষ্ট এক কাজের জন্য। এখনকার যুদ্ধবিমানগুলোকে বানানো হচ্ছে একসঙ্গে সব কিছু সামলাতে পারার মতো করে।
কে সেরা? কীভাবে মাপা যায়?
কোন যুদ্ধবিমান "সেরা" সেটা শুধু গতি বা আগ্রাসন দিয়ে মাপা যায় না। দেখতে হয়:
- সে কতটা "স্টিলথ" অর্থাৎ শত্রুর রাডার এড়িয়ে চলতে পারে
- কত উন্নত সেন্সর আছে
- কতটা তথ্য-ভিত্তিক যুদ্ধ করতে পারে
- কতটা বাস্তব যুদ্ধে নিজেকে প্রমাণ করেছে
- এইসব দিক দিয়ে F-35 এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর।
আর F-22 এখনও আকাশযুদ্ধের রাজা, কিন্তু সেটি এত ব্যয়বহুল ছিল যে অনেক আগেই এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান কার?
FlightGlobal-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা:
- দেশ মোট যুদ্ধবিমান
- যুক্তরাষ্ট্র ২,৬৭৯টি
- চীন ১,৫৮৩টি
- রাশিয়া ১,৫২২টি (অর্ধেকের বেশি পুরনো)
- ভারত ৬৪৩টি
- উত্তর কোরিয়া ৪৮২টি (প্রায় সবই অপ্রচলিত)
শুধু আকাশযুদ্ধের দিক দিয়ে সেরা?
এখানে F-22 Raptor-এর নাম আবারও আসবে। বহু বছর ধরে, বিশ্বজুড়ে মহড়ায় এটি বারবার প্রমাণ করেছে, আকাশযুদ্ধে এর জুড়ি নেই।
তবে এখন F-35-এর নতুন সংস্করণ ও উন্নয়ন এটিকে ধীরে ধীরে F-22-এর সমান বা কাছাকাছি নিয়ে আসছে।
৫ম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কার কত?
যুদ্ধবিমান আনুমানিক সংখ্যা
F-22 (US) ১৮৭টি
F-35 (US এবং মিত্র দেশ) ১,২০০+
J-20 (চীন) ২০০-৫০০টি (অনিশ্চিত)
J-35 (চীন) ৮টির বেশি
Su-57 (রাশিয়া) ২০টির মতো
সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও দক্ষ যুদ্ধবিমান – F-35 Lightning II
একটা সময় এই বিমানকে নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল। বলা হতো, অনেক কিছুই একসঙ্গে করতে গিয়ে কিছুই ঠিকঠাক করছে না। কিন্তু ধীরে ধীরে এই বিমান পরিপক্ক হয়েছে।
আজ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে F-35। এর স্টিলথ প্রযুক্তি, উন্নত সেন্সর, এবং অন্যান্য বিমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করে যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতা একে করে তুলেছে অনন্য।
এমনকি F-35-এর উপস্থিতি পুরনো জেট যেমন F-16 বা Eurofighter Typhoon-কেও আরও কার্যকর করে তোলে।
শুধু যুদ্ধবিমান না, দরকার পুরো নেটওয়ার্ক
একটা যুদ্ধবিমান একা যুদ্ধ করে না। এর পেছনে থাকে বিশাল নেটওয়ার্ক –
যেমন:
- আকাশ নজরদারির বিমান (AWACS),
- জ্বালানি সরবরাহকারী বিমান,
- স্যাটেলাইট নজরদারি,
- ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্লেন,
- এবং আধুনিক রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম।
এইসব দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনও অনেক দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
বিশ্বের প্রায় ৭৫% সামরিক ট্যাঙ্কার বিমান শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে, যা দূর দেশে আক্রমণ পরিচালনা করতেও তাদের অদ্বিতীয় করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলো এখনো বিশ্বের সেরা
F-35, F-22, F-15EX – এই ত্রয়ী এখনো যুদ্ধবিমানের জগতে রাজত্ব করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিকীকরণ ক্ষমতার কারণে এই বিমানগুলো শুধু নিজেরাই শক্তিশালী নয়, বরং অন্য দেশের একই ধরনের যুদ্ধবিমানের চেয়েও কার্যকর হয়ে ওঠে।
ইসরায়েল বা ইউরোপীয় দেশগুলো (যেমন: ফ্রান্স, ব্রিটেন) নিজেদের প্রযুক্তি দিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী মাল্টিরোল বিমান তৈরি করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক শক্তি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা – এক কথায়, বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি।
সরাসরি বললে:
F-35 এখনো সবচেয়ে দক্ষ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা এই বিমান ও তাদের সামরিক নেটওয়ার্ক – এই যুগে তাদের অপরাজেয় করে তুলেছে।
মারিয়া