ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি

নালিতাবাড়ীর গণঅভ্যুত্থান: ন্যায় বিচার প্রাপ্তী নিয়ে শঙ্কায় শহীদ আসিফের পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর 

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৫ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২০:০০, ৫ আগস্ট ২০২৫

নালিতাবাড়ীর গণঅভ্যুত্থান: ন্যায় বিচার প্রাপ্তী নিয়ে শঙ্কায় শহীদ আসিফের পরিবার

আমার সহজ সরল পোলাডারে ওরা গুলি কইরা মারছে। একবছর অইয়া গেল পোলা হরাইছি। আমার পোলা তো আর ফিইরা আইলো না। পুলার জন্য আজো পথের দিকে চাইয়া থাকি।

বুকে জমানো কষ্ট নিয়ে এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আসিফুর রহমান আসিফের মা ফজিলা খাতুন। তিনি আরো বলেন, পোলার কথা খুব মনে পড়ে। যখন মনে হয় তখন খুব কান্না করি। কিন্তু পুলা আমার ফিইরা আসে না। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
স্মৃতিচারণের সময় আসিফের পরিবারের সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা ন্যায় বিচার প্রাপ্তী নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেন।

সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তপ্ত রাজধানীর মীরপুরে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গার্মেন্টসকর্মী আসিফুর রহমান আসিফ (১৯)। আসিফ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন ও ফজিলা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে।

আসিফের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে তার পরিবারের লোকজন। আসিফের ছোট ভাই-বোন ও তার মা জানান তাদের স্বজন হারানোর কষ্টের স্মৃতি।

আসিফের মা ফজিলা খাতুন জানান, দুই ছেলে চার মেয়ের মধ্যে আসিফ ছিল দ্বিতীয়। বাবা আমজাদ হোসেন ছোটখাটো ব্যবসা করে যখন পরিবারের খরচ মেটাতে পারছিল না। তখন আসিফ ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। ১৩ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে ভালোই দিন চলছিল তাদের। 

হঠাৎ গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় আসিফ। পরে রাস্তাতেই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলি এসে তার মাথায় লাগে। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে মীরপুর আলোক হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তার বাবা আমজাদ আলী ফোনে ছেলের এক্সিডেন্টের খবর শুনে আলোক হাসপাতাল গিয়ে দেখে আসিফের মাথার ডানপাশে গুলি লেগেছে। সেখান থেকে ছেলেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে ব্যান্ডেজ করান। সেখান থেকে রিকশাযোগে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আসিফের মরদেহ নিয়ে এসে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের করেঙ্গাপাড়া গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পরবর্তীতে সরকার পতনের পর গত বছরের ২ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০১জনকে আসামি করে ঢাকার একটি আদালতে আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

মামলা দায়েরের কিছুদিন পর আসিফের গ্রামের বাড়ি কেরেঙ্গাপাড়া কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয় সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্নের জন্য। এদিকে, এ মামলার বিচার কবে হবে জানে না কেউ। আসিফ হত্যা মামলার দ্রুত বিচার দাবি তার পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর।

রাজু

×