
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। এই উদ্দেশ্যে সরকার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থফেরত আনতে সক্রিয় হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, বিদেশে পাচারকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে একটি নামকরা বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকার জানায়, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ইতিবাচক ফলাফল ইতিমধ্যে দেখা যেতে শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্তদের অর্জিত অর্থ-সম্পদের কিছু অংশ ইতিমধ্যে জব্দ হয়েছে বলেও জানানো হয়।
সরকার আশা প্রকাশ করেছে, এই প্রক্রিয়া সফলভাবে চালিয়ে গেলে আরও বিপুল পরিমাণ পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হবে, অন্যদিকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ও নৈতিক বার্তাও যাবে।
এদিকে দেশের যুব সমাজের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি হংকং-ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী হান্ডা বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি চীনা কোনো কোম্পানির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে এককভাবে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের ধারণা, হান্ডার বিনিয়োগ আরও চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে, যার মাধ্যমে দেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি হলো পানিভিত্তিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া। সরকার মনে করে, বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ এখনো যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি। বঙ্গোপসাগরের যে বিশাল অংশ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত, তা দেশের জমির পরিমাণের চাইতেও বেশি। অথচ এতদিন দেশের অর্ধেক ভূখণ্ডের চিন্তা করা হলেও পানিভিত্তিক অর্ধেক অংশ ছিল প্রায় উপেক্ষিত।
তিনি বলেন, “এখন থেকে আমাদের দেশের অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরকে সবসময় মাথায় রেখে অগ্রসর হতে হবে। এই অংশের পানির উপর দিয়ে দেশ-বিদেশের সঙ্গে আমরা বাণিজ্য করব। এতে করে আমরা পুরো পৃথিবীকেই আমাদের প্রতিবেশী করে তুলতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “বঙ্গোপসাগরের নিচে রয়েছে অফুরন্ত গ্যাস, আর পানির মধ্যে রয়েছে মৎস্যসম্পদ, যা প্রতিবছর ফসল দেয়। এই সবকিছুকে কেন্দ্র করেই আমাদের নতুন অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনাকে এগিয়ে নিতে হবে।”
সরকারের এসব উদ্যোগের লক্ষ্য একদিকে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা, অন্যদিকে তরুণ সমাজকে কর্মক্ষম ও সম্পৃক্ত রাখা। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা এবং পানিভিত্তিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, উভয়কেই দেশ পুনর্গঠনের কৌশল হিসেবে দেখছে বর্তমান সরকার।
Jahan