ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

ধর্ষককে ধর্ষক বলেই দিলেন সনদ! চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্রে চাঞ্চল্য

শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ২১:২৮, ৫ আগস্ট ২০২৫

ধর্ষককে ধর্ষক বলেই দিলেন সনদ! চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্রে চাঞ্চল্য

‘আমার জানামতে শরিফ ধর্ষণ করেছেন, একজন দুষ্কৃতকারী-দুশ্চরিত্রের’ ইনসেটে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল যে কেউ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে প্রত্যয়নপত্র চাইলেই পেয়ে যান। তাতে লেখা থাকে, প্রত্যয়ন প্রদানকারী চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রত্যয়নপত্র গ্রহণকারীকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তিনি সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নন। প্রত্যয়নপত্র গ্রহণকারীর সার্বিক মঙ্গল কামনা করা হয়। এতে খুশি হন প্রত্যয়নপত্র গ্রহণকারী।

কিন্তু এবার এর উল্টো ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল। একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তারাটি গ্রামের আব্দুল বারেক মিয়ার ছেলে শরিফ মিয়াকে (২২) প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন তিনি। প্রত্যয়নপত্রে শরিফকে ‌‘ধর্ষক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্যয়নপত্রে ইউপি চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন, ‘মো. শরিফ মিয়া। আমার জানামতে তিনি ইতিপূর্বে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করতে না পেরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। তিনি একজন দুষ্কৃতকারী এবং দুশ্চরিত্রের। তাছাড়া কিছুদিন আগে তিনি চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। তিনি সামাজিক বা আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। আমি তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি’।

শরিফ মিয়াকে ‘ধর্ষক’ হিসেবে উল্লেখ করে গত সপ্তাহে প্রত্যয়নপত্র দেন চেয়ারম্যান। তবে রবিবার (৩ আগস্ট) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক এ ঘটনাটি ভাইরাল হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন একই এলাকার  চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন শরিফ। পরে গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় শরিফকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এ ঘটনায় শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে শরিফকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু হানিফ সাংবাদিকের বলেন, ‘আমরা এত বছর দেখেছি কেউ প্রত্যয়নপত্র নিতে গেলে যাচাই-বাছাই না করেই সফলতা ও মঙ্গল কামনা করে দিয়ে দেওয়া হয়। চিন্তিত অপরাধী প্রত্যয়নপত্র চাইলে তাকেও দেওয়া হয়। কিন্তু এবার দেখলাম, ধর্ষককে ধর্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করে এ প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এতে চেয়ারম্যান প্রশংসার দাবিদার।’

নজরুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, ‘আমরা এখন নতুন বাংলাদেশে বসবাস করছি। আমরা চাই, সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলা হোক। যার যার জায়গা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হোক। ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া এমন প্রত্যয়নপত্রের পক্ষে আমি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল সংবাদ কর্মীদের বলেন, ‘যারা খারাপ তাকে ভালো মানুষের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া ঠিক না। সেটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। শরিফ ধর্ষণ করেছেন। তাই তিনি ভালো মানুষ না। তাই তাকে উপযুক্ত প্রত্যয়নপত্রই দেওয়া হয়েছে। যাতে অন্য খারাপ লোকেরা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

 

রাজু

×