
ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহীর পবা উপজেলা ও নওহাটা পৌর বিএনপির উদ্যোগে এক বিজয় র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধায় নওহাটা কলেজ মাঠে সমাবেশ ও র্যালির আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে এডভোকেট শফিকুল হক মিলনের নেতৃত্বে একটি বিজয় র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি নওহাটা কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে পৌর বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার কলেজের সামনে এসে শেষ হয়।
র্যালিতে “দাম কমাও, ভোট দাও”, “নির্বাচন চাই, ফ্যাসিবাদ নয়”, “খুনি হাসিনার বিচার চাই”—এমন নানা স্লোগানে মুখর ছিল চারপাশ।
এতে পবা উপজেলা ও নওহাটা পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, “বিএনপি জনগণের দল, কখনো পালিয়ে যায় না। বরং আওয়ামী লীগই সবসময় পালিয়ে বেড়ায়। ২০০৭-০৮ সালে ও এখন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। বর্তমানে দেশে ভোটাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। সেজন্যই জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমাদের এই আন্দোলন।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “দেশে এখন দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, কৃষি ও শিল্প খাতে ধস—সবকিছুর জন্য দায়ী এই অনির্বাচিত সরকার। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে হবে। যারা এই নির্বাচন চায় না, তারা বাংলাদেশের নয়, ভারতের দালাল।”
আব্দুস সালাম আরও বলেন, “কিছু সুবিধাভোগী টোকাই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। কারণ, নির্বাচিত সরকার আসলে তাদের চাঁদাবাজি আর চলবে না। আওয়ামী লীগের মতো বর্তমান সরকারেও অনেকে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারাও কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে। সময় এলে তাদের বিচার হবে।”
তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, “পতিত প্রধানমন্ত্রী এখন বিদেশে বসে বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। সেখান থেকে ভিডিও কলে দলের দোসরদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি দেশে আন্দোলন দমনে ছাত্র সংগঠনের ওপর ভরসা করছেন। এটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।
আব্দুস সালাম তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে পবা-মোহনপুর আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। একইসাথে পবা ও মোহনপুরবাসীর প্রতি তাঁর পাশে থাকার আহ্বান জানান।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, “বিএনপির আন্দোলনের সময় আমাদের নামে ষাট লক্ষ নেতা-কর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। দুই লক্ষ মামলা হয়েছে, প্রায় বিশ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অসংখ্য গুম। শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি। এইসব ঘটনা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এখনো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা সেই মনোভাবই দেশকে ধ্বংস করছে। জনগণ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। দেশের জনগণ এখন খুব সচেতন—তারা আর ভোট চুরি, জুলুম ও গুম বরদাস্ত করবে না।”
শফিকুল হক মিলন আরও বলেন, “বর্তমান সরকারের মদদে কয়েকজন ব্যক্তি ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। বিএনপি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র যারা করছে, তাদের পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতোই। এখন সময় এসেছে সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক।
এসময় পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও নওহাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাকিবুর ইসলাম পিটার এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র শেখ মকবুল হোসেন, পবা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ ও আব্দুস সালাম মাস্টার, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াদুদ হাসান পিন্টু। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন নওহাটা পৌর বিএনপির নেতা মামুনুর সরকার জেড, শরিফুর রহমান শরীফ, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান, এমদাদুল হক এমদাদ, জয়নাল আবেদীন, যুবদল নেতা ইফতেখারুল ইসলাম ডনি, যুবদল নেতা সুজন মোল্লা, তাইজুল ইসলাম, সোহেল রানা, মিজানুর রহমান মিলন, সাহেব জাদা, এডভোকেট তারেক, হাফিজুর রহমান হাফিজ, ছাত্রদল নেতা সোহেল রহমান, সুজনসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
রাজু